অনন্ত মহারাজ। —ফাইল চিত্র।
নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুন ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর একটি শিবিরের নেতা তথা বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত রায় (মহারাজ)— জেলা বিজেপির অন্দর থেকেই উঠল এমন দাবি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি নিজের বাড়িতে বৈঠক করেছেন। তার পরেই আবার দিল্লিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও দেখা করেছেন। এই ঘটনাক্রমের প্রেক্ষিতে কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেছেন, ‘‘উনি কোন নৌকায় পা রাখবেন, তা আগে স্পষ্ট করুন। একই সঙ্গে দুটি নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না। উনি (অনন্ত মহারাজ) প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। কিন্তু তার আগে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা প্রয়োজন।’’ অনন্ত পাল্টা বলেন, ‘‘আমি বিজেপির সাংসদ। সবার সঙ্গেই আমার সম্পর্ক আছে। কোচবিহারে যাঁরা এমন প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা দলকে জেতাতে পারেননি। তাই গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।’’
গত ১৯ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন অনন্তের বাড়ি। তার পরেই চলতি সপ্তাহে দিল্লিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন অনন্ত তথা নগেন্দ্র রায়। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘অনন্ত মহারাজ বিজেপির সাংসদ। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে তার মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছুই নেই। কিন্তু কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। যা আমরা, রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
তৃণমূল অবশ্য বিষয়টি নিয়ে খুবই সতর্ক। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘ওই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। গুরুত্ব দেওয়ার কিছু আছে বলেও মনে করি না।’’ তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ারও এক সুর, ‘‘উনি তাঁর দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আর মুখ্যমন্ত্রী তো তাঁর সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেছেন।’’
এ বারের নির্বাচনে কোচবিহার লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিককে ৩৯ হাজার ২৫০ ভোটে পরাজিত করেছেন তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ। দলীয় সূত্রের খবর, বিজেপির লোকসভা প্রার্থী ঘোষণার দিন অনন্ত মহারাজ তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁকে তেমন প্রচারেও দেখা যায়নি। ভোটে পরাজিত হওয়ার পর তা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিজেপির অন্দরে। একটি অংশ মনে করে, কোচবিহারে বিজেপির হারে অনন্তের ভূমিকা রয়েছে। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বিজেপির একাংশের ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে। সে বিতর্কই অন্য মোড় নেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতে।