আগুন: ডাম্পিং গ্রাউন্ডের বেশ কিছু জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে এ দিনও। ছবি: স্বরূপ সরকার
পরিবেশ বিধির তোয়াক্কা না করে শহরের উপকণ্ঠে সাহু নদীর ধারে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সেই বর্জ্যে আগুন লাগায় নানা রাসায়নিক বিক্রিয়া হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন শহরবাসীদের অনেকেই। তাঁদের সন্দেহ, রাত নামলেই বেআইনি ভাবে ফেলা চিকিৎসা-বর্জ্যে আগুন ধরানো হচ্ছে। তখনই কটূ ধোঁয়ায় শিলিগুড়ির আকাশ-বাতাস আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে বলে অনুমান করছেন তাঁরা। এতে শ্বাসকষ্ট, কাশি, দমবন্ধ হওয়া, বুক ধড়ফড় করার মতো রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
শিলিগুড়ি জুড়ে আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে, অনেক আলোচনায় উঠে আসছে ভোপাল প্রসঙ্গ। সম্প্রতি বেলুড়ে যে গ্যাস সিলিন্ডার ফুটো হয়ে ক্লোরিন গ্যাস ছড়িয়েছিল, কেউ কেউ তুলছেন সেই প্রসঙ্গও। বেলুড়ে জনাপঞ্চাশেক মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শিলিগুড়িতে এখনও তেমন কিছু ঘটেনি ঠিকই, কিন্তু আতঙ্ক ক্রমে ঘাড়ে চেপে বসছে।
শহরের অন্যতম চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রোজ রাত নামলে যে ধোঁয়া শহরের আকাশে ছড়াচ্ছে, তা থেকে শ্বাসকষ্টের রোগ বাড়তে পারে। চিকিৎসা-বর্জ্যে আগুন থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিষাক্ত ধোঁয়া তৈরি হতে পারে। কারণ, বেঞ্জিন জাতীয় রাসায়নিকই চিকিৎসা বর্জ্যে বেশি থাকে।’’ তাঁর মতে, পুরসভা ও প্রশাসন অবিলম্বে শহরের উপকণ্ঠে বর্জ্যে আগুন ধরানো বন্ধ করাতে না পারলে বড় বিপদ ঘটতে পারে।
শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র পারিষদ (সাফাই) মুকুল সেনগুপ্তও মানছেন, সাহু নদীর ধারে চিকিৎসা-বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এটা একেবারেই বেআইনি। কে বা কারা ফেলছে দেখতে হবে। এই বর্জ্য মাটির নীচে পোড়ানোর জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। তাদেরও খবর দেওয়া হয়েছে।’’
গত রবিবার থেকে রাত ৯টা বাজলেই শিলিগুড়ি শহরের আকাশ ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। এই ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে নাগরিকদের।
বহুতলের উপরতলার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ আরও বেশি। তাঁরা না পারছেন দরজা-জানালা খুলে রাখতে। আবার বন্ধ করে রাখলেও কটূ দুর্গন্ধ যুক্ত ধোঁয়ায় হাঁসফাস করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় পুরসভা, প্রশাসন, পরিবেশ দফতরের সমন্বয় চান নাগরিকরা।
গভীর রাতে শহরবাসী যখন ঘুমিয়ে থাকেন, সে সময়ে চিকিৎসা-বর্জ্যের আগুন থেকে বিষাক্ত ধোঁয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে কত বড় বিপদ হতে পারে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় শিলিগুড়ির নাগরিক সংগঠনগুলি। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ির নাগরিক সংগঠনের তরফে পরিবেশ আইনজীবী সুভাষ দত্তের কাছে বিশদে তথ্য পাঠানো হয়েছে। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘আমি সব তথ্য কলকাতা হাইকোর্টের গ্রিন বেঞ্চের সামনে পেশ করব।’’
শিলিগুড়ি মহকুমা প্রশাসন, দমকল, পরিবেশ দফতরের কর্তারাও অনেকে দৈনিক ধোঁয়ায় কতটা সমস্যা হচ্ছে, তা জানেন।
কিন্তু, তিন দিনেও ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’-এর ধোঁয়া বন্ধ করাতে কারও হেলদোল নেই দেখে অনেকেই আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শিলিগুড়ি নাগরিক সমিতির মুখপাত্র দুর্গা সাহা বলেন, ‘‘ঘুমের মধ্যে ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারাও পড়তে পারি! তবুও পুরসভা-প্রশাসন ধোঁয়া বন্ধে পদক্ষেপ না করছে না। সে ক্ষেত্রে রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় কি!’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চিফ ইঞ্জিনিয়র তাপস গুপ্ত বলেন, ‘‘বিশদে রিপোর্ট চেয়েছি। তা পেলেই পদক্ষেপ করব।’’