পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

সঙ্গীতা কুণ্ডু অন্তর্ধান রহস্যের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট সিআইডি-র কাছে রিপোর্ট তলব করতেই শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের অফিসারদের একাংশ অতি মাত্রায় তৎপর হয়ে উঠেছেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০০
Share:

সঙ্গীতা কুণ্ডু অন্তর্ধান রহস্যের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট সিআইডি-র কাছে রিপোর্ট তলব করতেই শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের অফিসারদের একাংশ অতি মাত্রায় তৎপর হয়ে উঠেছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই মামলার তদন্তে গোড়ার দিকে ভক্তিনগর থানার দু’জন অফিসার চূড়ান্ত ঢিলেঢালা মনোভাব দেখিয়েছেন বলে আগেই অভিযোগ উঠেছে। স্বভাবতই, উচ্চ আদালতে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন সঙ্গীতার পরিবারের আইনজীবীরা। উপরন্তু, দুজন অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগের পরে তা নিয়ে পুলিশ কমিশনারেটের উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হয়েছে কি না, সেই ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলতে পারেন তাঁরা।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়, রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের এডিজি তথা আইজি নটরাজন রমেশবাবু ভক্তিনগর থানার দুই অফিসারের ভূমিকা ও তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ পেয়ে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের রিপোর্ট তলব করেছিলেন। সেই বিষয়টিও উচ্চ আদালতের গোচরে আনা হয়েছে বলে আইনজীবীদের দাবি। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, তদন্তে কোনও গাফিলতি হয়নি। তবে কোথাও কারও ত্রুটি ধরা পড়লে অবশ্যই পদক্ষেপ করা হবে বলে ওই পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন।

এই অবস্থায়, আজ, সোমবার জলপাইগুড়ি আদালতে সঙ্গীতা অপহরণ মামলায় ধৃত পরিমলবাবুকে ফের তোলা হবে। সিআইডি-র তরফে পরিমলবাবুর পলিগ্রাফ টেস্ট ও ব্রেন ম্যাপিং করানোর জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু, ধৃতের আইনজীবীরা তাতে আপত্তি জানিয়েছেন। সিআইডি-র দাবি, পরিমলবাবুর কাছ থেকেই সঙ্গীতার অন্তর্ধান রহস্যের কিনারার হদিস পাওয়া যাবে। সিআইডির এক অফিসার জানান, পরিমলবাবু লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ১৭ অগস্ট সঙ্গীতা নিখোঁজ হয়েছেন। ১৫ অগস্ট পরিমলবাবুর সঙ্গে সঙ্গীতা যদি সারা দিন সেবকে কাটান, তা হলে তার পর থেকে ১৭ অগস্ট রাত ৯টা পর্যন্ত তাঁকে কোথায় কোথায় পরিমলবাবু দেখেছেন, সেটা স্পষ্ট হওয়া দরকার।

Advertisement

সেই সঙ্গে সঙ্গীতার দাদা শম্ভুবাবুর আইনজীবী অর্ণব সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘‘পরিমলবাবু দাবি করেছেন, ১৭ অগস্ট রাত ৯টায় সঙ্গীতা নিখোঁজ হন। তা হলে তাঁর আগে পর্যন্ত সঙ্গীতা কোথায় ছিলেন? যে হেতু সঙ্গীতা পরিমলবাবুর দেওয়া ফ্ল্যাটেই থাকতেন, তাই তাঁর গতিবিধির ব্যাপারে পরিমলবাবুর জানারই কথা। না হলে ধৃত কী ভাবে নিশ্চিত হলেন সঙ্গীতা ১৫ কিংবা ১৬ অগস্ট অথবা ১৭ অগস্ট দিনের বেলায় নিখোঁজ হননি? তা ছাড়া নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়রি কেন ৮ দিন পরে হল? ধৃত ব্যস্ত থাকলেও ম্যানেজার কিংবা বাড়ির লোককে দিয়ে করানোর ব্যবস্থা করতে পারতেন? পুলিশের কয়েক জনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে।’’ যদিও পরিমলবাবুর আইনজীবীদের তরফে অত্রি সেনগুপ্তের দাবি, তাঁদের মক্কেল যে নির্দোষ তা আদালতে প্রমাণ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘গোড়া থেকে তদন্তে সহযোগিতা করা সত্ত্বেও মক্কেলকে ধরা হয়েছে। তিনি এখনও তদন্তে সহযোগিতা করছেন।’’

তবে পুলিশের অন্দরের খবর, একজন মহিলা হারিয়ে যাওয়ার পরে থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়েরি হলে কী পদক্ষেপ করতে হবে, তার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্য পুলিশের সদর দফতর থেকে এক নির্দেশনামা সব থানায় পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি মিসিং ডায়েরির ক্ষেত্রে সেই মতো পদক্ষেপ করতে হবে। সঙ্গীতা অন্তর্ধানের মামলায় গোড়া থেকে সেই সব পদক্ষেপ ভক্তিনগর থানা কতটা করেছে, আর কতটা কেন করেনি তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের সদর দফতরেও সেই অভিযোগ পৌঁছেছে। তবে ভক্তিনগর তানার কয়েকজন অফিসার জানান, তাঁদের পক্ষ থেকে বিধি মেনে সব পদক্ষেপ করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement