রানা রায়। —ফাইল চিত্র।
চার মাস পর নিজের কর্মস্থল, কোচবিহারের আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল (এবিএন শীল) কলেজে গেলেন যাদবপুরের রেজিস্ট্রারকে হুমকি চিঠি দেওয়ায় অভিযুক্ত অধ্যাপক রানা রায়। কলেজে তাঁর আসাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। রানা ওই কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। মূলত ওই বিভাগের ছাত্ররাই রানার নাম নিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তোলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষ নিলয় রায়ের সঙ্গে দেখা করেন রানা। পরে অধ্যক্ষ সংবাদমাধ্যমকে জানান, রানা মেডিক্যাল লিভ (শারীরিক অসুস্থতাজনিত ছুটি) নিয়ে চার মাস অনুপস্থিত থাকার পর বৃহস্পতিবার পুনরায় কাজে যোগ দিতে এসেছিলেন। কিন্তু শারীরিক সুস্থতার শংসাপত্র (ফিট সার্টিফিকেট) জমা দিতে না পারার কারণে রানা কাজে যোগ দিতে পারেননি বলে জানান অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষের ঘরে রানা যখন বসে রয়েছেন, সেই সময় বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ছাত্রদের একাংশ। রানা কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়েও গো ব্যাক স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান পড়ুয়ারা।
বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের মধ্যে এক জন বলেন, “অধ্যাপক রানা রায়ের জন্য কলেজের বদনাম হয়েছে। ওঁর কলেজে আসা আমরা কেউ ভাল ভাবে নিচ্ছি না। উনি যদি এর পরেও কলেজে ঢোকার চেষ্টা করেন, তবে সবাইকে একত্রিত করে আমরা কলেজের গেটে তালা ঝোলাব।” ছাত্রদের বিক্ষোভ নিয়ে অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান যে, ছাত্রদের বিক্ষোভ এবং এই আবেগ ‘সঙ্গত’। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন গত ৩ সেপ্টেম্বর পুলিশের হাতে ধৃত রানা। রেজিস্ট্রারকে হুমকি চিঠি দেওয়ার সঙ্গে তিনি কোনও ভাবে যুক্ত নন বলেও দাবি করেছেন তিনি। রানার অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কেউ চক্রান্ত করছে।
যাদবপুরের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু এবং সহকারী রেজিস্ট্রারকে হুমকি চিঠি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রানার বিরুদ্ধে। বেলগাছিয়ার এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগের ভিত্তিতে গত রবিবার ওড়িশার ভুবনেশ্বর থেকে গ্রেফতার করা হয় রানাকে। গত ২ সেপ্টেম্বর দায়ের হওয়া ওই অভিযোগে পুলিশকে অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, তিনি বেলগাছিয়ার বাসিন্দা। রানাও বেলগাছিয়ার ভেটেরিনারি কলেজ এলআইজি হাউসিংয়ে থাকতেন। গত চার বছর ধরে তিনি নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করছেন ওই মহিলাকে। পুলিশকে ওই মহিলা জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে মাঝেমধ্যেই কুপ্রস্তাব দিয়ে ওই মহিলাকে চিঠি দিতেন রানা। যখন তখন পিছু নিতেন। এমনকি, গোপনাঙ্গও প্রদর্শন করতেন বলেও অভিযোগ। গত ১৭ অগস্ট ওই এলআইজি আবাসনের ভিতরেই অভিযোগকারিণীকে বলপূর্বক জড়িয়ে ধরেন রানা। এর পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হন অভিযোগকারিণী। নিজের অভিজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি রানার আরও কুকীর্তির কথা ফাঁস করেছেন তিনি।
এবিএন সিল কলেজ সূত্রে জানা যায়, রানার বাড়ি বেলগাছিয়ায় হলেও তিনি কর্মসূত্রে কোচবিহারেই থাকতেন। কিন্তু গত চার মাস ধরে তাঁর তিনি কলেজে যাননি। শেষ বার গত এপ্রিল মাসে কলেজে গিয়েছিলেন রানা। তার পর থেকে ‘মেডিক্যাল লিভে’ ছিলেন। রানা গ্রেফতার হওয়ার পরেই এবিএন শীল কলেজের অধ্যক্ষ নিলয় রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘আমি বিষয়টি নিয়ে নিজেই স্তম্ভিত। উনি কী কারণে এই ঘটনা ঘটালেন, তা আমি জানি না। তবে ওঁর এই কাজের জন্য কলেজের নাম খারাপ হল। উনি এপ্রিল মাস থেকে মেডিক্যাল লিভে রয়েছেন।’’ রেজিস্ট্রারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ইতিমধ্যের রানার বিরুদ্ধে যাদবপুর থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬, ৫০৯ এবং ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করা হয়। তবে একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আপাতত জামিনে মুক্ত রয়েছেন রানা। মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হলেও, তাঁকে কলেজে যোগ দিতে দেওয়া হবে কি না, তা উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ।