কলকাতা ভোটকে রোল মডেল করে তৃণমূল এ বার জলপাইগুড়ি পুরভোটে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে—মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ মহকুমাশাসককে ওই আশঙ্কার কথা জানালেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। নির্বাচন আধিকারিকদের এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জিও জানালেন তিনি। সন্ধ্যায় পথসভায় একই অভিযোগ তুলে শাসকদলকে বিঁধলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।
প্রদীপবাবু এদিন সকালে শহরে পৌঁছে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ‘রোড শো’ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আলিপুরদুয়ারের দলীয় বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়, জলপাইগুড়ির বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা। থানা রোডের দলীয় দফতর রাজীব ভবন থেকে বেরিয়ে তাঁরা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিক্রমা করেন। প্রদীপবাবু বলেন, “কলকাতা মডেল তৃণমূলকর্মীদের কাছে খুবই প্রিয় হয়েছে। ওঁরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ভোট করার চেষ্টা করছেন। ওই ষড়যন্ত্র ভেঙে ফেলার জন্য দলীয় কর্মীদের কাছে আবেদন রাখা হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, শহরের বিভিন্ন হোটেল ও স্কুলে বহিরাগতদের রেখে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। তাঁর কথায়, “শুনলাম তৃণমূল বহিরাগতদের এনে শহরের বিভিন্ন হোটেল ও স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করছে। আইন বলছে নির্বাচন কমিশন ওঁদের গ্রেফতার করতে পারে।” দুপুর নাগাদ রোড শো শেষ করে প্রদীপবাবু দলের জেলা নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে সোজা মহকুমাশাসকের দফতরে পৌঁছে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে বলেন, “বহিরাগতরা যেন গোলমাল পাকাতে না পারে, সে জন্য দ্রুত কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছি।”
বিকেলে সুর চড়িয়ে পথসভায় তৃণমূলকে আক্রমণ করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। তাঁর অভিযোগ, জলপাইগুড়ি পুরসভা দীর্ঘদিন থেকে কংগ্রেসের দখলে ছিল। কংগ্রেসের টিকিটে জিতে জয়লাভ করে কয়েকজন বিশ্বাসঘাতকতা করেন। তাঁর দাবি, “এবার ভোটে ওই বিশ্বাসঘাতকরা জবাব পাবেন।” কংগ্রেসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এদিন শহরে প্রচারে নামে বিজেপি। শহরের মাদ্রাসা ময়দানে আয়োজিত সভায় দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা অভিযোগ করেন, রাজ্যে মস্তান রাজ চলছে। কলকাতার পুরভোটের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, “এই ভাবে ভোট হওয়ার চেয়ে না হওয়া অনেক ভাল।” এর পরেই পুলিশের প্রতি তাঁর আবেদন, “২৫ এপ্রিল ওয়ান ডে ম্যাচ খেলুন। গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য এই খেলাটা জরুরি।”
যদিও বিরোধী শিবিরের সমস্ত অভিযোগকে এদিন ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন শাসক দলের নেতৃত্ব। প্রদেশ তৃণমূল সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, “জলপাইগুড়িতে সন্ত্রাসের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। প্রত্যেকের উচিত ঐতিহ্যকে রক্ষা করা।” একই দাবি করেন তৃণমূলের জেলা শ্রমিক নেতা মিঠু মোহন্ত। আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় অবশ্য বলেন, “ভাল প্রস্তাব। কিন্তু ঐতিহ্য রক্ষার অনেক বেশি দায়িত্ব শাসক দলের রয়েছে। সেটা তাঁরা পালন করুন।”