প্রতীকী ছবি।
১২৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক জনও চাকরিজীবী পরিবারের নয়। কয়েকজন ক্ষুদ্র চাষি পরিবারের। বাকিরা সবাই অভাবী পরিবারের। অধিকাংশেরই বাবা-মা দিনমজুরি করেন। শুধু তাই নয়। পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদেরও অনেককেও দিনমজুরি করতে হয়েছে। অনেকেরই বাবা-মা আবার দু’জনেই ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। বাজার থেকে শুরু করে রান্না করে খেয়ে নিয়মিত স্কুলে যাওয়া হয়ে উঠত না তাদের। আর গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া তো দূর অস্ত্। স্কুলের শিক্ষকরা সেটা জানতেন। ফলে স্কুলে এমন ভাবে পড়াতেন যাতে আর গৃহশিক্ষকের দরকার না হয়। পাশাপাশি পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়েও নিয়মিত খোঁজখবর নিয়ে সমস্যার কথা শুনে পড়াশোনায় উত্সাহ যোগাতেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের সেই প্রচেষ্টা আর সব বাধা এড়িয়ে পড়ুয়াদের লড়াইয়ের ফলও মিলেছে।
মালদহের চাঁচল থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম দরিয়াপুর ইমামপুর বারম্বল হাইস্কুল থেকে এ বার ১২৭ জন পরীক্ষার্থীর প্রত্যেকেই পাশ করেছে। হরিশ্চন্দ্রপুর হাই স্কুলের ছাত্র ঐতিহ্য সাহা ৬৭৭ পেয়ে মহকুমায় প্রথম ও রানি দাক্ষায়ণী গার্লস স্কুলের সুজান পারভিন ৬৭২ পেয়ে দ্বিতীয় হলেও দু’টি স্কুলেই তিন ও দু’জন করে অকৃতকার্য হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দরিয়াপুর স্কুলের সকলেই পাশ করায় ছাত্র-শিক্ষকদের পাশাপাশি এলাকা জুড়েই শুধুই খুশির আবহ।
স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, শুধু এ বার নয়। প্রতি বছরই স্কুলের গড়পড়তা ফল ভাল। এলাকার ৯৯ শতাংশ মানুষই কৃষক, দিনমজুর অথবা ভিন রাজ্যে থাকেন। আর তা জেনেই স্কুলের শিক্ষকরা পড়ুয়াদের প্রতি বাড়তি যত্ন নেন। গরম বা পুজোর ছুটিতে নিয়ম করে পড়াশোনার সময়ে সকাল বা সন্ধেয় হাজির হন পড়ুয়ার বাড়িতে। ঠিকঠাক পড়াশোনা হচ্ছে কি না, কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, তার খবর নেন। সমস্যা হলে শিক্ষকদের বাড়িতে কয়েকদিন পড়ে আসতে বলেন। আর তারই ফল মিলেছে। ১৯ জন পরীক্ষার্থী ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে। ৭৫ শতাংশের বেশি পেয়েছে ৯ জন। সব থেকে বেশি ৫৮৯ নম্বর পেয়েছে ক্ষুদ্র চাষি পরিবারের মেয়ে দিলওয়ারা সাহিল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ নাদেরুজ্জামানও ফলে খুশি। তিনি বলেন, ক্লাসের পড়ুয়াদের সম্পর্কে শ্রেণি শিক্ষকরা নিয়মিত রিপোর্ট তৈরি করেন। স্কুলে, বাড়িতে তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা এড়িয়ে তাদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলাটাই তাঁদের উদ্দেশ্য।