এমন নর্দমা থেকেই ছড়ায় দূষণ।—নিজস্ব চিত্র।
শহরকে সুন্দর করে গড়তে গেলে রাস্তা ঘাট ঠিক রাখা, গাছপালা লাগানো যতটা গুরুত্বপূর্ণ ততটাই দরকার যথাযথ নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। পুরসভা বা সরকারি দফতরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলির যেমন সে দিকে নজর দেওয়া দরকার তেমনই বাসিন্দাদেরও সচেতন হতে হবে। শহরের অনেক বস্তি এলাকাগুলিতে শৌচালয়ের বর্জ্য সরাসরি নর্দমার মধ্যে ফেলা হয়। নর্দমায় তা জমে এলাকার পরিবেশ দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কুরেশি মহল্লা, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বস্তি এলাকাগুলিতে এ ধরনের পরিস্থিতি রয়েছে। বাসিন্দারা সচেতন না হলে তা বন্ধ করা যাবে না।
আবার অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির আবর্জনা ময়লা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে ভরে নর্দমায় ফেলে দিতে দেখা যায় অনেককে। নর্দমার মধ্যে এ ভাবে ক্রমাগত আবর্জনা ফেলা হলে নিকাশি বেহাল হয়ে পড়তে বাধ্য। শহরে দোতলা, তিনতলা বাড়ির উপর থেকে একই ভাবে প্লাস্টিক্যারে ক্যারিব্যাগে মুড়ে আবর্জনা ড্রেনে ফেলতে অনেকেই দেখে থাকবেন। এটা কখনই কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রেও বাসিন্দাদের সচেতন হওয়া উচিত।
শিলিগুড়ি শহরে পরিকল্পনা মাফিক নিকাশি ব্যবস্থা কোনও দিনই গড়ে ওঠেনি। একই নর্দমা কোথাও ছয় ইঞ্চি চওড়া, কোথাও চার ফুট। তার উপর নর্দমার ঢাল অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ নয়। নাকাশি নালা দিয়ে তাই সঠিক ভাবে জল যেতে পারে না। নালার মধ্যেই সেই নোংরা জল দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্ষায় পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে ওঠে। নর্দমার জল উপচে রাস্তায় ওঠে আসে। রাস্তা নর্দমা আলাদা করে বোঝা যায় না। বাইক, সাইকেল আরোহী অনেককেই সে কারণে বর্ষার দিনে রাস্তার ধারে থাকা নর্দমায় পড়তে দেখেছি।
শহরের নিকাশি নিয়ে এখনই নতুন করে ভাবনা চিন্তা করা দরকার। শিলিগুড়ি শহর জুড়েই বিভিন্ন এলাকাতে বহুতলের সংখ্যা বেড়েছে। একটি বহুতলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৪০টি পরিবারও বাসবাস করছে। সে কারণে ব্যবহার হওয়া নোংরা জলের পরিমাণও বেড়েছে। ওই এলাকায় অতীতে যে সরু নর্দমা ছিল তা এখন সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থার উপযোগী থাকছে না। নালাগুলি দিয়ে নোংরা জল গিয়ে বড় হাইড্রেনে ফেলা এবং সেই জল নিকাশির সুষ্ঠু ব্যবস্থা দরকার। পরিকল্পনার অভাবে সেই ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। ভেবে অবিলম্বে সেই ব্যবস্থা করা। দরকার হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সঠিক ভাবে সেই কাজ করা। কেবল আগামী ৪-৫ বছরের জন্যই নয় এমন ভাবে পরিকল্পনা নিয়ে হবে যাতে পরবর্তী সময়েও সমস্যা না হয়।
দীপজ্যোতি চক্রবর্তী, আইনজীবী, দেশবন্ধুপাড়া, শিলিগুড়ি।
শিলিগুড়ি রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। ক্রমশই তা বেড়ে উঠছে। অথচ তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় আমাদের মতো বাসিন্দাদের অনেককেই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
নিকাশি প্রসঙ্গে শহরের বাজারগুলির অবস্থাও ভয়াবহ। সে কারণে বাজারগুলির নিকাশি ব্যবস্থার উপরে আলাদা করে জোর দেওয়া দরকার। না হলে বাজার লাগোয়া এলাকার পরিবেশও বিষিয়ে উঠবে। বাজারের কথা বলতে গেলেই মহাবীরস্থান লাগোয়া ডিআই ফান্ড বাজারের নিকাশি পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থার কথা মনে করিয়ে দেয়। বছরের পর বছর ধরে সেখানকার ননিকাশি নালাগুলি পরিষ্কার হয় না। সেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যেই মাছ মাংসের বাজার বসছে। ব্যবসায়ীরাও ওই পরিবেশে থেকে যে কোনও সময় খারাপ অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন। সুভাষপল্লি বাজার, বিধানমার্কেট বাজারের অবস্থাও খুবই খারাপ। আমাদের মতো বাসিন্দারা ওই সমস্ত বাজারে বাজার করতে গিয়েও পরিস্থিতি বুঝতে পারি। একই পরিস্থিতি শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের। নিকাশি নালার মধ্যেই দিনের পর দিন নোংরা জল জমে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে।
জনস্বাস্থের পক্ষে তা বিপজ্জনকও বটে। এর অভিজ্ঞতাও গত গত কযেক বছরে আমাদের হয়েছে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে শহরের কয়েক জন বাসিন্দা। তার পাশাপাশি এনসেফ্যালাইটিসের হানা। মশা বাহিত হয়েই এই সমস্ত রোগ ছড়িয়েছে। আর সেই মশার উৎসের প্রধান জায়গা শহরের নর্দমাগুলি।
বাজারগুলি বাদে শহরের মধ্যে থাকা বিভিন্ন এলাকার হাইড্রেনগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই জল সরে না। নিকাশি নালায় জমে থাকা ওই জলই মশার আঁতুর ঘর। হাইড্রেন ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ছোট নর্দমাগুলিরও একই পরিস্থিতি নিকাশি নালাগুলিকে বন্ধ করে দেয়। আবর্জনা সাফাই করে, নিয়মিত নিকাশি পরিষ্কার করে বাসিন্দাদের সুষ্ঠু নাগরিক পরিষেবা দেওয়া যাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তারা এই বিষয়গুলির উপর একটু নজর দিন। রাজনৈতিক ভেদ ভুলে বিভিন্ন দফতরের হাতে হাত মিলিয়ে এ ব্যাপারে কাজ করা উচিত। না হলে শহর বেড়ে উঠলেও বসবাসের পক্ষে তা স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে না।
অপূর্ব রায়, সুকান্তনগর, শিলিগুড়ি।