আরাধনা: শিলিগুড়ির মহানন্দা নদীতে ছট পুজো। নিজস্ব চিত্র
শিলিগুড়ি শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীতে সরকারি নির্দেশ মেনে ছট ঘাট তৈরি হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য সক্রিয় রয়েছে একাধিক দফতর। পুরসভা, মহকুমা প্রশাসন, পুলিশ নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে প্রতিটি এলাকায়। অভিযোগ, শহরের অন্য নদীগুলিতে নেই তেমন নজরদারি। সেই সুযোগে শহর লাগোয়া সাহু, বালাসন, পঞ্চনই, লচকা-সহ সর্বত্র নিয়ম ভেঙে তৈরি হয়েছে ছট ঘাট। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া ওই সব নদীর মাঝখানে অনেক জায়গাতেই বালির বস্তা ফেলে তৈরি হয়েছে ছট ঘাট। এর ফলে নদীগুলি স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে। পরিবেশকর্মীদের আরও অভিযোগ, পুর এলাকায় পুজোর পর নদী পরিষ্কার করা হলেও পঞ্চায়েত এলাকায় তা করা হয় না। ফলে নাব্যতা কমে যাওয়া ওই নদীগুলি থেকে ব্যাপক মাত্রায় দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
অভিযোগ, শিলিগুড়ি ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া ছোটা ফাঁপড়ি, নেপালি বস্তি এলাকায় সাহু নদীর মাঝখানে বেশ কিছু ঘাট তৈরি হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে মাটি কেটে পাড় উঁচু করে ফেলা হয়েছে। ঘাট তৈরির জন্য নদীর মাঝখানে অনেক জায়গাতেই বড় পাথর ও ইট ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ। একই ভাবে মাটিগাড়ার বিভিন্ন এলাকায় বালাসন, লচকা, পঞ্চনই নদীর উপর ঘাট তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফ-এর কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘শহর লাগোয়া নদীগুলির উপর কার্যত কারওরই নজর নেই। অথচ প্রতিটি নদীই স্থানীয় জনপদে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখনও সাহু, লচকা, বালাসনের বিভিন্ন জায়গায় দুর্গা বা কালীপুজোর কাঠামো পরে আছে। তার থেকেই সহজেই অনুমান করা যায় ছট পুজোর পর নদী কতটা পরিষ্কার করা হবে।’’
রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক তুহিনশুভ্র মন্ডল বলেন, ‘‘জল ছাড়া ছট পুজো হয় না। সেই পুজো করতে গিয়ে যদি আমরা নদীকেই নষ্ট করে ফেলি তা হলে ভবিষ্যতে পুজোর জন্য জল পাওয়া যাবে না। সবাইকেই সচেতন হতে হবে।’’ সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা দিয়েছে মালদহ বাদে অবশিষ্ট উত্তরবঙ্গে ২৬টি নদীর অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। কোনও কোনও নদী মাঝপথে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গিয়েছে। তাই কোনও অবস্থাতেই নদীর মাঝখানে পুজোর জন্য কৃত্রিম ঘাট তৈরি করা উচিত নয়। পুণ্যার্থীরা তাঁদের পুজোর উপকরণ নদীতে ফেলবেন। সেগুলি যদি দ্রুততার সঙ্গে সাফ করা না হয়, তা হলে ছোট নদীগুলিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার বলেন, ‘‘নদী বাঁচাতে আমাদের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়েছে। পুজোর পর যাতে নিজেদের এলাকার নদীগুলি পরিষ্কার করে দেওয়া হয়, তার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।’’