শোক: মেয়ে আর নেই। ভেঙে পড়েছেন পরিবার-পরিজনেরা। সোমবার হাসপাতালে। ছবি: বিনোদ দাস
নাবালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গোড়াতেই রাজনীতির রং লেগেছিল। নাম জড়িয়েছিল শাসকদল তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতার। তা নিয়ে অস্বস্তি ছিল দলের অন্দরেই। নাবালিকার মৃত্যুর পরে তার পরিবারকে ‘আগলে’ রাখলেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি নিজেই।
হাসপাতাল থেকে মৃতার দেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়া এবং শ্মশানে দাহ করা পর্যন্ত ব্লক সভাপতি দাঁড়িয়ে রইলেন। বিরোধীদের অভিযোগ, নাবালিকার পরিবার যাতে বেঁফাস কোনও মন্তব্য করতে না পারে, সে জন্যই শাসকদলের নেতারা ‘পাহারা’ দিচ্ছেন। নাবালিকাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এক বিজেপি কর্মীও গ্রেফতার হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের নাম জড়ানোর অস্বস্তি কাটাতে বিজেপির নাম জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
এ দিন সকালে হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শিবশঙ্কর দত্ত। তিনি আগেও হাসপাতালে গিয়ে নাবালিকার সঙ্গে দেখা করেছেন। এ দিন সারাক্ষণ তিনি হাসপাতালে ওই পরিবারের সঙ্গেই ছিলেন। ময়না-তদন্তের পরে দেহ নিয়ে পরিবার রওনা হয়, তখনও শিবশঙ্কর ছিলেন। তিনি বলেন, “দলের জেলা সভাপতি অসুস্থ। তাই তিনি নিজে না এসে আমাকে নাবালিকার পরিবারের পাশে থাকার দায়িত্ব দিয়েছেন। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা মেয়েটির পরিবারের পাশে রয়েছি। মেয়েটির চিকিৎসারও যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তৃণমূলের কেউ এ ব্যাপারে জড়িত নয়।”
বিজেপির জেলা সভাপতির কথায়, “তৃণমূল এখন নাবালিকার পরিবারকে চোখে চোখে রাখার চেষ্টা করছে। তাতে কোনও লাভ হবে না।”
নাবালিকার মৃত্যুতে সোমবার পথে নামে বিজেপি, সিপিএমও। সোমবার সকালে বিজেপি পৌঁছে যায় নাবালিকার গ্রামে, সিপিএম জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট প্রতিবাদ সভার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। হাসপাতালে গিয়েছিলেন বিজেপির জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়ও। তিনি বলেন, “নাবালিকা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চাই।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “মেয়ের বাবা সিবিআই চান। কারণ রাজ্য পুলিশ, প্রশাসন, সরকারের উপর আস্থা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে ওঁদের। অপরাধীর দাদা তৃণমূল বলে পুলিশ নড়েনি। জামিন পেয়েছে। অপরাধীদের সঙ্গে যারা আছে তারা কোনও ভাবেই তদন্ত করতে পারে না।’’
জেলা পুলিশের দাবি, ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগের পরে নাবালিকা নিজেই শারীরিক পরীক্ষা করাতে চায়নি। আদালত জামিন দিলে তাদের কিছু করার নেই বলে দাবি পুলিশের। তদন্তে যেমন জানা গিয়েছে, সে ভাবেই সব এগিয়েছে, বলছে পুলিশ।