দুপুর বারোটায় পরীক্ষা শুরু। তার দু’ঘণ্টা পরে ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজল। তার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রের সিঁড়ির ঘরের জানলায় উঁকিঝুঁকি দিতে দেখা গেল দুই ছাত্রীকে। আমবাগানে তখন কয়েকজন যুবকের জটলা। সেখান থেকেই চিৎকার ভেসে গেল, ‘‘চলে যা। আজ যাওয়া যাবে না।’’ মুখভার করে জানলা ছাড়ল ওই দুই মেয়ে।
কিন্তু কেন গেলেন না?
আম বাগানে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকেরা বলেন, “পরীক্ষা শুরুর আগে আমরা বলেছিলাম দু’ঘন্টা বাজার পাঁচ মিনিটের মধ্যে জানলায় আসতে। আমরা তোদের হাতে নকল দিয়ে দেব। তাই নকল নিতে এসেছিল ওরা।’’ তা হলে গেলেন না কেন? যুবকদের একজন এগিয়ে এসে আঙুল তুলে দেখালেন, সামনের পুলিশকর্মীদের। বললেন, ‘‘এ দিন বাইরে যত পুলিশ রয়েছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন ভোটের রুটমার্চ চলছে। তাই আজ আর নকল পৌছানোর ঝুঁকি নিলাম না।”
বুধবার মাধ্যমিকের ভুগোল পরীক্ষায় এমনই দৃশ্য দেখা গেল মালদহের ইংরেজবাজার থানার সান্তা দেবী হাইস্কুলে। শুধু এই স্কুল নয়, ইংরেজবাজারের রায়গ্রাম, নিবেদিতা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, সাট্টারি, ভর্তিটারি, মানিকচকের কালিন্দ্রী হাই স্কুলেও দেখা যায় কড়া পুলিশি প্রহরা।
এ দিন পরীক্ষা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সান্তা দেবী হাই স্কুলে ঘাঁটি গেড়েছিলেন আইসি পূর্ণেন্দু কুণ্ডু। মানিকচক, ইংরেজবাজারের বিভিন্ন স্কুলে নিয়মিত কমব্যাট ফোর্স নিয়ে টহলদারি চালাচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকার। এ ছাড়া প্রতিটি স্কুলের চার পাশে তিন জন, চার জনের একটি করে দল গড়ে পরীক্ষাকেন্দ্র ঘিরে রেখেছিলেন পুলিশ কর্মীরা। স্কুলের ১০০ মিটারের মধ্যে অভিভাবকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এ দিন।
যদিও গত দু’দিন আগেই উল্টো ছবি ছিল স্কুলগুলোতে। সান্তা দেবী স্কুলে দেখা গিয়েছিল, জানলার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে পরীক্ষার্থীরা। আর পুলিশের নজর এড়িয়ে দৌড়ে নকল জানলার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন একদল যুবক। এমনকী, এক বালিকাকে দিয়েও কিছু অভিভাবক পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে নকল পাঠান।
শুধু তাই নয়, পুলিশের মাথার উপর দিয়ে ঢিলের সঙ্গে কাগজের টুকরো বেঁধে নকল উড়িয়ে দিতেও দেখা গিয়েছে। আর তাদের সামাল দিতে ঘাম ছুটেছিল কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের। গত, মঙ্গলবার ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে মোতায়েন ছিলেন চার পুলিশকর্মী, সিভিক ভলেন্টিয়ারদের নিয়ে মোট দশ জন। এ দিন কিন্তু খোদ আইসি সহ প্রচুর পুলিশকর্মী মোতায়ন ছিলেন। সান্তা দেবী স্কুল চত্বর থেকে নকল সরবরাহের চেষ্টার অভিযোগে চার যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রতিবারই নকল সরবরাহের ছবি প্রকাশ্যে আসায় মুখ পোড়ে মালদহের। এ বার সেই তকমা ঘোচনোর জন্য আমরা সব রকম চেষ্টা করছি।”
পুলিশের এমন তৎপরতা দেখে খুশি অভিভাবকরাও। এক অভিভাবক বলেন, “এ দিন শান্তিতে ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা দিতে পারল।’’