নিজস্ব চিত্র।
সাধারণ অপহরণের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুরনো এক মামলার পর্দা ফাঁস করল রায়গঞ্জ থানার পুলিশ। আফিম পাচারকারীকে খুন, তারপর আফিম সরিয়ে বিক্রি করে টাকা হাতানোর অভিযোগে অভিযুক্ত দু’জনের সন্ধান পাওয়া গেল অন্য এক অপহরণের মামলায়।
নাটকীয় এই তদন্তের শুরু রায়গঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া একটি অভিযোগের ভিত্তিতে। মানসী শর্মা নামে এক মহিলা অভিযোগ করেন তাঁর স্বামী মদন শর্মাকে সুজন বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি অপহরণ করে পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাইছেন৷
অভিযোগের ভিত্তিতে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্তে নেমে শুক্রবার রাতে করণদিঘী থানার রসাখোয়ার ভোপলা ঘাট এলাকা থেকে অপহৃত মদনকে উদ্ধার করে সেই সঙ্গে অপহরণকারী সুজনকে গ্রেফতার করে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ। কিন্তু কেন একজন সাধারণ মানুষ অপহরণ করলেন সুজন? অপহরণের পর টাকা দেওয়ার ক্ষমতা মদনের আছে কি না, তা তো আপাতভাবে বোঝার উপায় নেই। তাহলে? সন্দেহ তৈরি হয় পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে।। অপহৃত ও অপহরণকারী দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। অবশেষে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জালে ধরা পড়ে যায় দু’জন। জানা যায় আলিপুরদুয়ারের কালচিনিতে আফিম পাচারকারী খুনের সঙ্গে জড়িত দু’জনেই।
পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে সবটাই জানিয়েছেন এঁরা। বলেছেন, তাঁরা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দু’জন লরি নিয়ে আলিপুরদুয়ারের কালচিনি যান। পথে হরিয়ানার এক আফিম পাচারকারীকে গাড়িতে তোলেন তাঁরা। এর পর দু’জনে মিলে হরিয়ানার বাসিন্দা আফিম পাচারকারীকে খুন করেন। সেই সময়, এই খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে সুজনকে গ্রেফতার করে কালচিনি থানার পুলিশ। তাঁর ৩ মাস জেলও হয়। এ দিকে অপর অভিযুক্ত মদন শর্মা গা ঢাকা দিয়ে রায়গঞ্জ শহরে এসে বসবাস শুরু করে। ওই আফিম ব্যাবসায়ীর থেকে হাতানো আফিম বিক্রি করে পুরোটাকাই হাতিয়ে নেন তিনি। ৩ মাস পর জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে সুজন করনদিঘীতে ফিরে আসেন। গত ২৬ মে সুজন মদনের সাথে যোগাযোগ করে তাঁকে রায়গঞ্জ থানার অধীন নাগরের ভাঙাবাড়িতে এক চায়ের দোকানে ডেকে আনেন৷ সেখানেই সেই অপহরণের পর হাতানো আফিম বিক্রির টাকা দাবি করেন মদনের কাছে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তখনই সুজন তুলে নিয়ে যান মদনকে। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি মদনের। জেরায় ওই দু’জন পুরো ঘটনা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করে পুলিশ।
শনিবার রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসপ্রিৎ সিংহ জানান, জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনিতে হরিয়ানার বাসিন্দা সাম্বির ভাইয়া নামের এক আফিং পাচারকারীর খুনের ঘটনা সামনে এসেছে। সেই মামলায় সুজন ও মদন দুজনেই যুক্ত ছিলেন। পুলিশ ধৃতদের শনিবার রায়গঞ্জ আদালতে পেশ করে। আপাতত পুলিশি হেফাজতে আছেন দুই অভিযুক্ত।