রবিবার আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে ছবি আঁকছেন এক চিত্রশিল্পী। নিজস্ব চিত্র।
বাইরে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সরকারি গানের অনুষ্ঠান বাতিলের দাবিতে তখন ধুন্ধুমার বিক্ষোভ। ভিতরে ফাঁকা দর্শকাসন নিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর অপেক্ষায় কলাকেন্দ্রের সাংস্কৃতিক মঞ্চ। প্রতিবাদীদের আটকাতে রবিবার দুপুর থেকেই কলাকেন্দ্রকে পুলিশ প্রায় ‘দুর্গে’ পরিণত করেছিল। কলাকেন্দ্রে যাওয়ার সব রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড বাঁধা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শুরুর আগে জেলা পুলিশ সুপার নিজে প্রস্তুতি দেখে গিয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ছিল এলাকায়। যদিও বিক্ষোভের কারণে ঘণ্টাখানেক পরে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শনিবারের মতো এ দিন রবিবারও কলাকেন্দ্রের দর্শকাসন ছিল কার্যত ফাঁকা। আন্দোলনকারী নাগরিকদের তরফে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সুদীপন মিত্র বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠানে দর্শক নেই, প্রেক্ষাগৃহ ফাঁকা। এটাই আমাদের নৈতিক জয়। আরজি করের মেয়েটির বিচার চাই।”
ঘটনার সূত্রপাত, শনিবার বিকেলে সরকারি গানের অনুষ্ঠান বাতিলের দাবিতে চিকিৎসক-শিক্ষক-সহ নাগরিকেরা কয়েকজন কলাকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে ভ্যানে তুলে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায় এবং ঘণ্টাখানেক বাদে থানা থেকে ছেড়ে দেয়। এর প্রতিবাদে এ দিন রবিবার মিছিল নিয়ে কলাকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। সেই কর্মসূচিকে ঘিরে রবিবার দুপুর থেকে তেতে ওঠে কলাকেন্দ্র চত্বর। দুপুরে আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে কলাকেন্দ্রের সামনে ছবি আঁকার প্রস্তুতি শুরু করেন চিত্রশিল্পীরা। তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। চিত্রশিল্পী কৌশিক ঘোষ বলেন, “আমরা আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে ছবি আঁকার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পুলিশ সরিয়ে দিয়েছে। আমরা দূরে গিয়ে ছবি এঁকে কলাকেন্দ্রের সামনে যেতে চেয়েছিলাম, পুলিশ বাধা দিয়েছে।”
বিকেল ৪টে নাগাদ কিছুটা দূরে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সামনে জড়ো হতে থাকেন চিকিৎসক, শিল্পী থেকে নাগরিকেরা। বাম এবং কংগ্রেস নেতাদেরও দেখা যায় জমায়েতে। এ দিকে ততক্ষণে কলাকেন্দ্রের চারপাশ পুলিশে ছয়লাপ। সব রাস্তায় ব্যারিকেড। সঙ্গীতানুষ্ঠান ঘিরে এমন নিরাপত্তা নজিরবিহীন বলে দাবি। সাড়ে ৪টে নাগাদ বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে এলে হাকিমপাড়া মোড়ের ব্যারিকেডে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। তারপর কখনও ধাক্কাধাক্কি, কখনও স্লোগান, পুলিশের সঙ্গে বচসায় তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। বিক্ষোভ থেকে ব্যারিকেডের ও-পারে দাঁড়ানো মহিলা পুলিশকর্মীদের উদ্দেশ্যে অশালীন মন্তব্য, কটূক্তি করা হয় বলে অভিযোগ।
গত শনিবারের আচরণের জন্য পুলিশকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও বিক্ষোভ থেকে দাবি ওঠে। এরই মধ্যে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সুদীপন মিত্র পুলিশের নজর এড়িয়ে ব্যারিকেডের ও-পারে চলে যান। তা দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সুদীপনের সঙ্গে পুলিশের বচসাও হয়। কিছু পরে ব্যারিকেডে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। বলেন, “প্রেক্ষাগৃহ ফাঁকা।” বিক্ষোভকারীরা চলে যাওয়ার প্রায় আধঘণ্টা পরে অনুষ্ঠান শুরু হয়।