রায়গঞ্জের হোম

আবাসিককে খুনে ধৃত সংস্থার সভাপতি

আবাসিককে পিটিয়ে খুনে অন্যতম অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাঁর ও তাঁর ছেলে ওই সংস্থার নেশামুক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্ণধার বিজিত দাসের বিরুদ্ধে শনিবার অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের মাসতুতো দাদা। রবিবার সকালে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিদ্যুৎবিহারী দাসকে গ্রেফতার করে। হেমতাবাদের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার বিদ্যুৎবাবুকে শনিবার দুপুরেই থানায় আটক করে নিয়ে আসা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৫
Share:

আবাসিককে পিটিয়ে খুনে অন্যতম অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাঁর ও তাঁর ছেলে ওই সংস্থার নেশামুক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্ণধার বিজিত দাসের বিরুদ্ধে শনিবার অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের মাসতুতো দাদা। রবিবার সকালে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিদ্যুৎবিহারী দাসকে গ্রেফতার করে। হেমতাবাদের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার বিদ্যুৎবাবুকে শনিবার দুপুরেই থানায় আটক করে নিয়ে আসা হয়।

Advertisement

পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি বিদ্যুৎবাবু ও তাঁর ছেলে তথা ওই কেন্দ্রের কর্ণধার অভিযুক্ত বিজিত দাস ওই আবাসিককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার পর বিজিতবাবু পলাতক। শনিবার দুপুরে মালদহের নালাগোলা এলাকার বাসিন্দা মানস শিকদার (৪৩) নামে মৃত ওই আবাসিকের মাসতুতো দাদা সুশান্তকুমার সরকার বিজিতবাবু ও বিদ্যুৎবাবুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ দিন বিদ্যুৎবাবুকে রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক ঝিলম গুপ্তা তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। অভিযুক্তের আইনজীবী স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিদ্যুৎবাবুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় ও বিজিতবাবু বর্তমানে কোথায় রয়েছেন, তা জানার জন্যই পুলিশ বিদ্যুৎবাবুকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করে। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছে।’’

রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মানসবাবুকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট ও তদন্তে জানা গিয়েছে। বিদ্যুৎবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিজিতবাবু-সহ আরও দুই নেশাসক্ত আবাসিকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, বিজিতবাবু ও বিদ্যুৎবাবুর বিরুদ্ধে মানসবাবুকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠার পর পরিবারের লোকজন আতঙ্কে ওই কেন্দ্রের বাকি নেশাসক্ত আবাসিকদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। এর পর পুলিশ কেন্দ্রটি সিল করে দেয়।

এ দিকে ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ওই কেন্দ্র থেকে একটি রক্তমাখা প্লাস্টিকের পাইপ, একটি প্লাস্টিকের বাক্স বোঝাই নেশা ও ঘুমের বহু ট্যাবলেট এবং দু’টি পর্নোগ্রাফি ভিডিওর সিডি উদ্ধার করেছে। পুলিশের অনুমান, শুক্রবার মানসবাবু মদ খেতে চেয়ে হইচই করায় ও ওই কেন্দ্রের দু’টি ঘরে মলত্যাগ করায় তাঁকে ওই প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়। তবে ঘটনার সময়ে বিদ্যুৎবাবু সেখানে ছিলেন কিনা, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত নয়। তাদের অনুমান, বিজিতবাবু ছাড়াও ওই কেন্দ্রের আরও দুই নেশাসক্ত আবাসিক মানসবাবুকে ওই দিন মারধর করে থাকতে পারে। তদন্ত ও গ্রেফতারের স্বার্থে ওই দুই আবাসিকের নাম, পরিচয় ও তাদের ঠিকানা গোপন রেখেছে পুলিশ।

নেশামুক্তি ও পুনর্বাসনের নামে ওই কেন্দ্রটি চালু করা হলেও সেখানে নেশাসক্ত আবাসিকদের চাহিদা অনুযায়ী নেশা ও ঘুমের ওষুধ দেওয়া হত বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে। তবে কেন্দ্র থেকে পর্নোগ্রাফি ভিডিওর দু’টি সিডি উদ্ধার হলেও টিভি ও ডিভিডি প্লেয়ার উদ্ধার না হওয়ায় নেশাসক্ত আবাসিকদের অশ্লীল ভিডিও দেখানো হতো কিনা, তা এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। এ দিন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা বিজিতবাবুর বাড়ি থেকে ওই সংস্থার সরকারি রেজিস্ট্রেশন, সমাজসেবার কাজের অনুমতির শংসাপত্র-সহ একাধিক নথি উদ্ধার করে খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছেন।

মৃতের মাসতুতো দাদা সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘পুলিশের ভূমিকায় আপাতত আমরা সন্তুষ্ট। যে ভাবেই হোক অবিলম্বে বিজিতবাবুকে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছি।’’

এ দিন আদালতে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎবাবু দাবি করেন, তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁরা কোনও আবাসিককে পিটিয়ে মারেননি। তিনি বলেন, ‘‘কে বা কারা মানসবাবুকে পিটিয়ে মারলেন, তা পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে বার করুক। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্কে ছেলে পালাতে বাধ্য হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement