বিনিময়: বিজেপি সাংসদের কাছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ নিয়ে অনুরোধ। নিজস্ব চিত্র
তিন চাকার সাইকেল নিতে এসে সামনে সাংসদকে দেখে প্রতিবন্ধী সতু রায় অনুরোধ জানালেন, “স্যর, দয়া করে আমাদের ঘরের টাকা ছাড়ার ব্যবস্থা করুন।” এক অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের সরঞ্জাম বিতরণ পর্ব চলছিল। সেখানেই ছিলেন বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। সেই ব্যস্ততার মাঝে অতর্কিতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের টাকা নিয়ে এমন অনুরোধে খানিকটা হকচকিয়ে যান বিজেপি সাংসদ।
তৃণমূলের তরফে বেশ কিছু দিন ধরে অভিযোগ করা হচ্ছে, রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এ রাজ্যের আবাস যোজনার বরাদ্দ আটকে রেখেছে। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, রাজ্যে আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েই টাকা বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। রবিবার সকালে জলপাইগুড়িতে যেখানে সাংসদের কাছে আবাস যোজনা নিয়ে অনুরোধ ধেয়ে এসেছিল, সেটিও রাজনৈতিক মঞ্চ ছিল না। মারোয়ারী যুব মঞ্চের তরফে প্রতিবন্ধীদের সরঞ্জাম বিলি চলছিল। সাংসদ জয়ন্ত সেখানে আমন্ত্রিত হিসাবে এসে সরঞ্জাম বিলি করছিলেন।
জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বাহাদুর ঠুটাপাকড়ির বাসিন্দা প্রতিবন্ধী সতু রায় সাংসদের হাত থেকে তিন চাকার সাইকেল নেওয়ার সময়ে আবাস যোজনার টাকা নিয়ে অনুরোধ করেন। সাংসদ সে অনুরোধ শুনে হাসি মুখেই দুর্নীতির প্রসঙ্গ ছুঁয়ে যান। তিনি বলেন, “এ রাজ্যে পদ্মশ্রীকেও ঘর দেওয়া হয় না। আপনাদের মতো লোকের জন্যই তো কেন্দ্র প্রকল্প করেছে।” সম্প্রতি ময়নাগুড়ির সারিন্দাবাদক মঙলাকান্তি রায় পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়ার পরে বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, ভাঙা ঘরে থাকলেও মঙলাকান্তি রায়কে প্রধানমন্ত্রী আবাসে ঘর দেওয়া হয়নি। সে অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছিল, অন্য একটি সরকারি প্রকল্পে মঙলাকান্তি রায় আগে ঘর পেয়েছিলেন। এ দিন সাংসদের ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জেলা তৃণমুল সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, ‘‘সরকারি ঘর পাওয়ার মাপকাঠিতে কেউ না পড়লে তাঁকে কী করে ঘর দেওয়া হবে? কিন্তু বাংলার মানুষের হয়ে ঘরের টাকা আনার দায়িত্ব যাঁদের সেই বিজেপি সাংসদরাই কেন্দ্রের কাছে টাকা বন্ধ করতে বলছেন, সেই জবাবদিহিসাংসদ আগে করুন।’’
এ দিন বিজেপি সাংসদকে আবাসের ঘরের টাকা নিয়ে অনুরোধ করা সতু রায়ের নাম প্রাপক তালিকায় রয়েছে। বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সতু তিন দশক ধরে প্রতিবন্ধী। হাঁটতে পারেন না। তিন চাকার সাইকেল চালান। জলপাইগুড়ি শহরে ভিক্ষে করে সংসার চালান। তাঁর স্ত্রী নমিতা রায়ও প্রতিবন্ধী, তাঁর হাতের সমস্যা। দম্পতির ছেলেমেয়ে নেই। বাড়িতে মা রয়েছেন। কাঁচা বাড়িতে থাকেন। সতু বলেন, “আবাস প্রকল্পে নাম আছে, সমীক্ষাও হয়েছে। শুনেছি কেন্দ্রীয় সরকার টাকা আটকে রেখেছে। আজ সাংসদকে সামনে পেয়েছিলাম। সাংসদ তো কেন্দ্রের প্রতিনিধি। তাই তাঁকে আমার দুঃখের কথা জানিয়ে আবাসের ঘরের টাকা যাতে ছাড়া হয় তার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছি।” খানিকটা থেমে সতু বললেন, “আর কোনও উদ্দেশ্য নেই, আমি কোনও রাজনৈতিক দলও করি না।”
জেলায় আবাস প্রকল্পের অগ্রাধিকার তালিকায় নাম থাকা প্রায় ৩৬ হাজার বাসিন্দাও সতু রায়ের মতো বরাদ্দের অপেক্ষা করে রয়েছেন।