দিন কয়েক আগে টোটো থেকে পড়ে গিয়ে কোমরের নীচে চোট পেয়েছিলেন বাবুপাড়ার কিশোরকুমার শর্মা৷ ব্যথা না কমায় শুক্রবার দুপুরে গিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে৷ ঝাঁ চকচকে হাসপাতালটি দেখে খুশি হয়েছিলেন বছর ৫৫-র ওই প্রৌঢ়৷ কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখানোর পরে তাঁর পরামর্শে এক্স-রে করতে গিয়ে রীতিমতো বিস্মিত তিনি৷ কর্মীরা জানালেন, মেশিন খারাপ, তাই এক্স-রে করাতে যেতে হবে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের জেলা হাসপাতালে৷ উপায় না থাকায় একটি টোটো ভাড়া করে এক আত্মীয়কে নিয়ে সেখানেই ছুটলেন তিনি৷ আর যাওয়ার আগে বললেন, ‘‘মাত্র ১৮ দিন আগে চালু হওয়া এত বড় একটা হাসপাতালে মেশিন খারাপ থাকায় এক্স-রে হবে না, ভাবতেই পারছি না!’’
শুধু এক্স-রে মেশিন খারাপ হওয়ায়ই নয়, ৭ নভেম্বর ঘটা করে এই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু হলেও, এখনও সেখানে চালু হয়নি অপারেশন থিয়েটারগুলি। জেলা হাসপাতাল থেকে সার্জারি বিভাগ এখানে স্থানান্তরিত হওয়ায় সেখানেও সুযোগ নেই অস্ত্রোপচারের। ফলে শেষ১৮ দিন জলপাইগুড়িতে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের সব অস্ত্রোপচারই
বন্ধ বলে অভিযোগ৷ স্বাস্থ্য দফতরের খবর, নেহাতই ছোট অস্ত্রোপচারগুলিই কোনও মতে হচ্ছে সেখানে৷ বড় অস্ত্রোপচারে বহু পরের তারিখ দেওয়া হচ্ছে৷ কারও জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে তাকে রেফার করা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে৷
সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হলেও ভর্তি হওয়া রোগীদের সিটি স্ক্যানেরও ব্যবস্থা হয়নি৷ প্রয়োজন হলে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যেতে হচ্ছে জেলা হাসপাতালে। সরকারি ব্যবস্থায় সিটি স্ক্যান হলেও, রোগী বা রোগীর আত্মীয়রা দুর্ভোগে পড়ছেন বলে অভিযোগ৷ চালু হওয়া এত বড় হাসপাতালে এত অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে বিভিন্ন মহলে৷ অনেকের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ সফরে আসা মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করতেই সব কিছু প্রস্তুত না করে জেলা হাসপাতালের কিছু বিভাগ বন্ধ করে তড়িঘড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে তা চালু হয়েছে৷ কিন্তু এতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের৷ চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালে সব ব্যবস্থা যে চালু হয়নি, তা রোগীর আত্মীয়রা বুঝছেন না৷
জলপাইগুড়ির সিএমওএইচ জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘কোনও নতুন অপারেশন থিয়েটার চালু করতে গেলে সেটা আগে ডিস-ইনফেকটেড করতে হয়৷ তা করার জন্য কাগজপত্র উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে৷ সম্মতি এলে হয়তো শনিবার থেকেই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শুরু হবে৷’’ সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থাও সেখানে দ্রুত চালুর চেষ্টা চলছে বলে জানান সিএমওএইচ৷ তবে এক্স-রে মেশিন খারাপ থাকার কথা মানেননি তিনি৷