sand smuggling

‘মাফিয়া বালি তুললে বাড়ি হবে কী দিয়ে!’

বালি তোলা আটকাতে কোনও কোনও এলাকায় বাসিন্দাদের মরিয়া হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে আবাস যোজনাও, দাবি প্রশাসনেরই একটি সূত্রের।

Advertisement

অনির্বাণ রায়, অরুণাংশু মৈত্র

জলপাইগুড়ি, ধুপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:০৯
Share:

ফাইল চিত্র।

Advertisement

‘প্রাণ গেলেও নদী থেকে বালি তুলতে দেব না’— মঙ্গলবার এমনই স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির মাগুরমারির বাসিন্দারা। জলপাইগুড়ির কিছু এলাকায় বাসিন্দারা এ ভাবেই বালি তোলা আটকাতে রুখে দাঁড়িয়েছেন। জলঢাকা বা তিস্তা নদীর পাড়ে বালি তুলতে ডাম্পার নামলেই হয় বাসিন্দারা ছুটে যাচ্ছেন, নয়তো খবর পাঠাচ্ছেন সংবাদমাধ্যমে। এই প্রবণতা বাড়তে থাকায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ওপরে ‘ভরসা’ কী কমছে আমজনতার?

বালি তোলা আটকাতে কোনও কোনও এলাকায় বাসিন্দাদের মরিয়া হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে আবাস যোজনাও, দাবি প্রশাসনেরই একটি সূত্রের। প্রতিটি এলাকাতেই এক সঙ্গে আবাস যোজনার ঘর তৈরি শুরু হবে। এক সঙ্গে বহু বাড়ি তৈরি হলে অনেক বালি লাগবে। সে আশঙ্কাও রয়েছে বাসিন্দাদের একাংশের। যেমন গত মঙ্গলবার ধূপগুড়ির মাগুরমারিতে বাসিন্দাদের বিক্ষোভে প্রশ্ন শোনা যায়, ‘‘সব বালি মাফিয়ারা তুলে নিলে আমাদের ঘর তৈরি হবে কী দিয়ে?” একই ভাবে বুধবার পাহারপুর এলাকায় তিস্তায় নামা একটি ডাম্পারকে ঘিরে বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। কিছুক্ষণ ডাম্পারটি নদীর পাড়ে অপেক্ষার পরে, চলে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তিস্তা থেকে অবৈধ ভাবে বালি চুরি হয়। অথচ, বাসিন্দাদের সেই বালি কিনতে হচ্ছে মোটা টাকা দিয়ে।

Advertisement

জেলার ৮২টি নদী খাদান থেকে বালি তোলা হয়। এক-একটি খাদানে ২০০ ‘সিএফটি’ (ঘনফুট) বালি তোলার জন্য হাজার থেকে বারোশো টাকা দিতে হয়। যদিও খোলা বাজারে ৩০০ ঘনফুট বালি তথা, একটি বড় ট্রাকে বোঝাই বালির দাম পড়ে অন্ত দশ হাজার টাকা। যে বড় ট্রাক বা ডাম্পার নদীখাতে নামিয়ে বালি তোলা হয়, তাতে অন্তত ৫০০ ঘনফুট বালি আঁটে। তার জন্য দিতে হয় ন্যূনতম চোদ্দো হাজার টাকা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চুরি করা বালি মোটা টাকায় কিনতে হবে কেন? এই ক্ষোভ থেকেই জেলায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তা নদীর পাড় লাগোয়া এলাকা তো রয়েইছে, সঙ্গে ডুয়ার্সের বানারহাট থানার অন্তর্গত দুরামারির নোনাই, রঙাতি, কালুয়া নদী থেকে দেদার বালি তোলার অভিযোগ রয়েছে। পাহাড়ি নদী ডায়নার খাতে যন্ত্র বসিয়ে বালি-পাথর তোলা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “বিষটি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা হবে।” অন্য দিকে, ধূপগুড়ির ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক জয়দীপ রায় ঘোষের আক্ষেপ, “অভিযান শুরুর আগেই বালি চোরদের কাছে খবর পৌঁছে যাচ্ছে।’’ শহর লাগোয়া যমুনা নদীর পাড়ের বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এলাকায় একটি কমিটি হয়েছে। বালি চুরি হতে দেখলে সে কমিটি রাস্তায় নেমে ট্রাক আটকাবে।

বালি তোলা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর অভিযোগ, “শাসকদলের নেতা এবং আধিকারিকদের মদতেই বালি চুরি চলছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, “বালি চুরির সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement