বন্ধ এটিএমের দরজা। তবু অপেক্ষা গ্রাহকদের। — রাজকুমার মোদক
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর কাটল তিন দিন। কাজকর্ম শিকেয় তুলে টাকা জোগাড়ে ছুটছেন দিশাহারা মানুষ। কিন্তু শনিবারেও দিনভর অপেক্ষার পরেও নতুন-পুরনো কোনও নোটই মিলল না উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ এটিএমে। তাই বেলা গড়াতেই পুরোনো পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট বদলাতে ফর্ম নিয়ে অনেকেই ছুটেছেন ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসে। তত ক্ষণে সেখানেও দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শিলিগুড়ি থেকে মালদহ, আলিপুরদুয়ার থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর সর্বত্র।
টাকা না পেয়ে শনিবার বিকেলে শিলিগুড়ির স্টেশন ফিডার (এসএফ) রোডের এসবিআই-এর শাখায় হাঙ্গামা বাধায় গ্রাহকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, কয়েক ঘণ্টা ধরে লাইন দিয়ে রাখলেও, বিকেলে আগাম ঘোষণা ছাড়াই ব্যাঙ্ক লেনদেন বন্ধ করে দেয়। দুপুরে হিলকার্ট রোডের শাখাতেও গ্রাহকদের বিক্ষোভ হয়েছে।
শুক্রবার থেকে এটিএমে টাকা তোলা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছিল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি। সে আশায় অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু শনিবার অধিকাংশকেই হতাশ হতে হয়েছে। পাল্লা দিয়ে ছড়িয়েছে গুজবও। তাতেও বেড়েছে দুর্ভোগ। জলপাইগুড়ির কদমতলার একটি এটিএমে দুপুর তিনটে থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টাকা মিলবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। লাইন হয়ে যায় এটিএমের সামনে। কিন্তু টাকা মেলেনি।
নোট সমস্যার সঙ্গে ধুপগুড়িতে খাড়ার ঘা বসিয়েছে ‘লিঙ্ক’ না থাকার সমস্যা। শনিবার সকাল থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পযর্ন্ত লিঙ্ক ফেল থাকে ধূপগুড়ির তিনটি ব্যাঙ্ক ও বিমা অফিসের। ফলে টাকা জমাও নেওয়া হয়নি। রায়গঞ্জের মোহনবাটি, নেতাজি সুভাষ রোড, মহাত্মাগাঁধী রোড, সুদর্শনপুর ও বিদ্রোহীমোড় এলাকার কিছু এটিএম থেকে অবশ্য সকালে টাকা মিলেছে।
বিকেলের পরে কিছুটা হলেও স্বস্তি মেলে শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের। পাকুড়তলা মোড়, নজরুল সরণি, কলেজ পাড়া, কাছারি মোড়, হিলকার্ট রোডে থাকা বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমগুলিতে টাকা মিলতে শুরু করে। প্রতিটি এটিএমের সামনে ভিড় জমে যায়। রাজা রামমোহন রায় রোডে বন্ধন ব্যাঙ্কের এটিএম থেকেও বিকেলের পর থেকে টাকা মিলেছে। ব্যাঙ্কের সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাহকদের সুবিধে দিতে ৮০ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলেন তারা। যাতে দ্রুত টাকা ফুরিয়ে না যায় সে কারণে কার্ড পিছু ৫০০ টাকা করে তোলা যাবে এমন ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিংহভাগের এটিএম কাউন্টারের দরজাই এ দিন খোলেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমগুলি সচল না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়। রবিবারের ছুটির দিনে আরও দুর্ভোগের আশঙ্কা রইল উত্তরবঙ্গের শহর-গ্রাম-জনপদে।
যারা পোস্ট অফিসের উপর ভরসা করেছিলেন তাদের অবস্থাও তথৈবচ। কোচবিহারে কেউ ছ’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেন। কেউ দাঁড়িয়ে থাকলেন আট ঘণ্টা। অভিযোগ, তার পরেও টাকা না নিয়ে ফিরতে হয় গ্রাহকদের। তাঁদের অভিযোগ, ভোরের আলো ফোটার থেকেই তাঁরা টাকা বদল করবেন বলে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। বেলা ১২ টার পরেও ডাকঘর কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট ভাবে কোনও তথ্য দিতে পারেননি। কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, টাকার জন্য তাঁরাও অপেক্ষা করেছিলেন। টাকা না পাওয়াতে তাঁরা বদল দিতে পারেননি।
জলপাইগুড়ি এবং হলদিবাড়ির পোস্টঅফিসগুলিও এ দিন ছিল শুনশান। কারণ কোনও পোস্টঅফিসেই টাকা ছিল না। মালবাজার প্রধান ডাকঘর থেকে এ দিন ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। প্রধান ডাকঘরে পুরোনো ৫০০ এবং ১ হাজার টাকার নোট বদল করে দিলেও, শিলিগুড়ির কোনও উপ ডাকঘর এবং শাখায় এই পরিষেবা মেলেনি। তাই দীর্ঘক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে গ্রাহকদের।
শনিবার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য দাবি করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নির্দেশিকায় উপযুক্ত কারণ দেখালে এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ চাইলে পুরসভা বেশি টাকা তুলতে পারবে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে তা আমরা জানিয়ে টাকা তোলার ব্যবস্থা করতে বলব। না হলে প্রায় দু’ হাজার ঠিকা এবং অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না।’’