ক্ষতি ফসলের, ত্রাণ না মেলায় ক্ষোভ

কোথাও কাঁচাবাড়ির টিনের চালা উড়ে গিয়েছে। আবার কোথাও গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় টেলিফোন ও বিদ্যুতের তার ছিড়ে যাওয়ায় ল্যান্ডফোন ও ইন্টারনেটের পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিঘের পর বিঘে জমির ধান ও ভুট্টাগাছ শুয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে আধঘন্টা ধরে চলা ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির তান্ডবে এভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, ইটাহার ও করণদিঘি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

পুরাতন ভাবুক গ্রামে ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে বাড়ি।

কোথাও কাঁচাবাড়ির টিনের চালা উড়ে গিয়েছে। আবার কোথাও গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় টেলিফোন ও বিদ্যুতের তার ছিড়ে যাওয়ায় ল্যান্ডফোন ও ইন্টারনেটের পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিঘের পর বিঘে জমির ধান ও ভুট্টাগাছ শুয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে আধঘন্টা ধরে চলা ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির তান্ডবে এভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, ইটাহার ও করণদিঘি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ওই পাঁচটি ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বিএসএনএল সূত্রের খবর, ঝড়ের তাণ্ডবে ওই পাঁচটি ব্লকের একাধিক জায়গায় ল্যান্ডফোনের তার, টেলিফোনের খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় পাশাপাশি একাধিক মোবাইল টাওয়ারে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় রাত থেকেই জেলায় বিএসএনএলের মোবাইল পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার থেকে বিএসএনএলের সমস্ত স্তরের কর্মীরা দুদিনের ধর্মঘট শুরু করেছেন। ফলে বুধবার বিএসএনএলের কর্মীরা পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজে নামেননি।

Advertisement

জেলাশাসক রণধীর কুমার বলেন, ‘‘জেলার নয়টি ব্লকের বিডিওদের কাছেই ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত এই বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে দুর্গতরা সরকারি নিয়মে ক্ষতিপূরণ পাবেন।’’ তিনি জানান, ‘‘বিএসএনএলের ল্যান্ডফোন, ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল পরিষেবা বিপর্যস্ত থাকায় ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে প্রাথমিক খোঁজখবর নিতে সমস্যা হচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাদের।’’

জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা শাশ্বতকমল রায় জানান, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জেলার ওই পাঁচটি ব্লকের শতাধিক গ্রামে বোরো ধান ও ভুট্টার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্লক কৃষি আধিকারিকদের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির তান্ডবে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, ইটাহার ও করণদিঘির বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক হাজারেরও বেশি কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মূলতঃ রায়গঞ্জ ব্লকের মহিপুর, ভাতুন, বীরঘই, কমলাবাড়ি-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত, কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ভান্ডার, মোস্তাফানগর, অনন্তপুর, রাধিকাপুর, ধনকোল, মালগাঁও ও বোচাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত, হেমতাবাদ ব্লকের হেমতাবাদ, বাঙালবাড়ি বিষ্ণুপুর ও চৈনগর গ্রাম পঞ্চায়েত, ইটাহার ব্লকের ইটাহার, কাপাসিয়া, জয়হাট, পতিরাজপুর ও মারনাই গ্রাম পঞ্চায়েত ও করণদিঘি ব্লকের করণদিঘি, রসাখোয়া, দোমহনা ও আলতাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কোথাও কাঁচাবাড়ির টিনে চালা উড়ে গিয়েছে, আবার কোথায় কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে। একই সঙ্গে, ওই সব গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় বহু গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সকালে অবশ্য বাসিন্দারাই বিভিন্ন এলাকার রাস্তার উপর থেকে গাছ সরানোর ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি, ঝড়ের তাণ্ডবে ও গাছ পড়ে টেলিফোন ও বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। ধান ও ভুট্টাগাছ শুয়ে পড়ে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বিচ্ছিন্ন ছিল। বিকেল থেকে ধীরে ধীরে বিদ্যুতের পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও বিএসএনএলের ল্যান্ডফোন, ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি।

এদিন হেমতাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন হেমতাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমিতা সরকার। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির তরফে ঘরহীন ৫০টিরও বেশি পরিবারের হাতে ত্রিপল ও শুকনো খাবার তুলে দেওয়া হয়েছে।’’

রায়গঞ্জের বিডিও অমূল্যচন্দ্র সরকারের দাবি, বিএসএনএলের মোবাইল পরিষেবা বিপর্যস্ত থাকায় বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসনের তরফে তাঁদের কাছে লোক পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সংগ্রহ ও দুর্গতদের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ত্রাণ বিলির কাজ দ্রুত শুরু করা সম্ভব হত।’’ তিনি জানান, ‘‘দুর্গতদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা হাতে পাওয়ার পর প্রশাসনের তরফে তাঁদের সরকারি সাহায্য করা হবে। বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।’’

ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement