সচেতনতায়: শব্দবাজির বিরুদ্ধে খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে পথে আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব। ছবি: নারায়ণ দে
কড়াকড়ি রয়েছে। তার মধ্যেই যেন ঘাপটি মেরে লুকিয়ে রয়েছে শব্দাসুর। আঁধার নামলেই বাইরে বেরিয়ে এসে দাপাচ্ছে সে। কালীপুজো আগে থেকেই এই শব্দাসুরের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। শব্দবাজি রুখতে প্রশাসন বারংবার আশ্বাস দিলেও লুকিয়ে চুরিয়ে যে শব্দবাজি বিক্রি চলছেই তা বোঝা যাচ্ছে বাজারে ঘুরলেই।
আলিপুরদুয়ার
শব্দবাজি রুখতে শহরাঞ্চলে যতটা কড়াকড়ি, গ্রামাঞ্চলে ততটা নেই বলেই অভিযোগ৷ আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শহর থেকে একটু দূরে অনেক জায়গাতেই দেদারে শব্দবাজি বিকোচ্ছে বলে অভিযোগ৷ তবে শহরেও যে শব্দবাজি বিক্রি একেবারে বন্ধ করা গিয়েছে, তাও নয়৷ পকেট থেকে টাকা একটু বেশি খরচা করলেই বাজি চলে আসছে হাতের নাগালে৷ পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মূলত অসম ও বিহার থেকেই এই শব্দবাজি আলিপুরদুয়ারে ঢুকে পড়ছে৷ এ ছাড়াও কলকাতা বা শিলিগুড়ি থেকেও চোরাপথে জেলায় আসছে এই শব্দবাজি৷ পুলিশ সূত্রের খবর, নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি রুখতে গোটা জেলাতেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে৷ চলছে তল্লাশি ও ধরপাকড়৷ ইতিমধ্যেই ফালাকাটা থেকে ৪০ লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ শব্দবাজি-সহ অসমের দু’জন গ্রেফতার হয়েছে৷ জেলার আরও একাধিক থানা শব্দবাজি আটক করেছে৷ আর এটাই চিন্তা বাড়াচ্ছে নানা মহলে৷ অনেকের অভিযোগ, এ থেকেই স্পষ্ট পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে চোরাপথে শব্দবাজি ঢুকে পড়ছে জেলায়৷
নিষিদ্ধ শব্দবাজির বিরুদ্ধে রবিবার আলিপুরদুয়ারে প্রচারেও নেমেছিল একদল খুদে৷ তাদের সঙ্গে প্রচারে নামেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও৷ ছিলেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও৷ পুলিশ কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, কালীপুজোয় শব্দবাজি পোড়ানো রুখতে তাঁরা সতর্ক৷ আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, ‘‘জেলায় যাতে শব্দবাজি বিক্রি না হয় সেজন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে৷ এ ব্যাপারে জেলার প্রতিটি থানাকেই সতর্ক করা হয়েছে৷ জেলার সর্বত্রই তল্লাশি ও অভিযান চলছে৷ সেইসঙ্গে ধরপাকড়ও চলছে৷’’
ধূপগুড়ি
কালীপুজোর জন্য উত্তরবঙ্গে পরিচিতি রয়েছে ধূপগুড়ির। সেই ধূপগুড়িতেই কোথাও আতসবাজির আড়ালে, আবার কোথাও প্রকাশ্যে দেদার বিকোচ্ছে শব্দবাজি। অভিযোগ, প্রশাসনের নিষেধ সত্ত্বেও দিল্লি, কলকাতা, শিলিগুড়ি তো বটেই চেন্নাই, ধানবাদ, ঝাড়খণ্ডের মতো ভিন্ রাজ্য থেকেও ঢুকছে শব্দবাজি। তারপরে সেগুলি ছড়িয়ে যাচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহালয়ার পর থেকে প্রশাসনের তরফে বৈধ আতসবাজির দোকানগুলিতে অভিযান চলছে। তাই মূলত ছোট দোকান ও বাজি বিক্রি হয় না, এমন দোকান থেকেই মিলছে শব্দবাজি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজি বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, অন্য বাজির তুলনায় শব্দবাজির চাহিদাই বেশি। যেমন চাহিদা রয়েছে ‘টেন সাউন্ড’ ও ‘সেভেন সাউন্ড’ পটকার। এই বাজিগুলি ফাটলে ১০ বার ও ৭ বার আওয়াজ হয় বলে দাবি বিক্রেতাদের। এ ছাড়া চকোলেট ও বাচ্চু বোমার চাহিদাও রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। দোদমা এবং বড় আকারের চকোলেট বোমার খোঁজও করছেন খদ্দেররা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শব্দবাজি আনা হচ্ছে বাসের ছাদে করে। বাজি বিক্রির অনুমোদিত দোকানগুলি নিজেরা শব্দবাজি বিক্রি করছেন না বটে, কিন্তু তাঁরা অন্য দোকানদারদের মাধ্যমে শব্দবাজি বিক্রি করাচ্ছেন। কোথাও কোথাও আতসবাজির আড়ালে চলছে শব্দবাজির বিক্রি। যদিও প্রকাশ্যে শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) থেন্ডুপ শেরপা বলেন, “নিয়মিত অভিযান চলছে। কোথাও নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রির খবর নেই।”
কোচবিহার
কালীপুজোর আর একদিন। কোচবিহারে তার আগে থেকেই যেন মহড়া দিতে শুরু করেছে ‘শব্দদানব’। রাতের দিকে মাঝে মাঝে শব্দবাজির দাপট চলতে থাকছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, কালীপুজোর মধ্যে ওই শব্দবাজির দাপট কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কোচবিহার শহরের ভবানীগঞ্জ বাজার তো বটেই, ছোটখাটো বাজারেও জায়গায় লুকিেয় ওই শব্দবাজি বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ। এক প্যাকেট বাজি দুশো থেকে তিনশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রবিবার রাতেও ঘুঘুমারিতে উদ্ধার হয় শব্দবাজি। পুলিশ তিন জনকে আটকও করে। জেলা পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “বেআইনি শব্দবাজি বিক্রি বা ব্যবহার করা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”