পাহাড়: বাজারে বেড়েছে খুচরো। সমস্যায় বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
নেতাজি মার্কেটে হোলসেলের ব্যবসা করেন মালদহ মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু। তাঁর চেম্বারে দেখা গেল পাশেই রাখা দু’টি কয়েনের পাত্র উপচে পড়ছে। একটিতে ১০ ও অন্যটিতে পাঁচ টাকার কয়েন। অসহায় হয়ে বললেন, ‘‘চালাতে পারছি না। জমে যাচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা হোলসেলে পণ্য কিনতে এসে নোটের পাশাপাশি কয়েকশো করে কয়েন দিয়ে যাচ্ছেন।
বছর পঞ্চাশের শচীন্দ্র সিংহর মুখেও এমনই হাসি। রবিবার করে মালদহের নেতাজি মার্কেটের ফুটপাথে রেডিমেড জামাকাপড়ের ব্যবসা করেন। বাকি দিন জেলার পাকুয়া, গাজোল, মথুরাপুরের সাপ্তাহিক হাটগুলিতে পসরা সাজান। মাস ছ’য়েক আগেও তাঁর দোকানে জামাকাপড়ের ছড়াছড়ি ছিল। ক্রেতাদের একাধিক ধরনের কাপড় দেখিয়ে পছন্দ করিয়ে তবেই ছাড়তেন। কিন্তু এখন দোকানে জামাকাপড় কমে গিয়েছে।
কারণ কী? তিনি জানালেন, খুচরো পয়সাই এর কারণ। নোট বন্দির পরপর ক্রেতাদের কাছ থেকে দেদার খুচরো নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এখন সে গুলি ব্যাঙ্কও যেমন নিচ্ছে না, তেমনই মহাজনও নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সেই কয়েন জমছে বাড়িতে। পুঁজি থেকেও কয়েনের জন্য তা কমে যাওয়ায় অল্প জামাকাপড় কিনে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। সংসারেও টান পড়ছে। এই সমস্যা বুঝবে কে— আক্ষেপ তাঁর।
শুধু তিনিই নয়, মালদহ জেলায় আনাজ বিক্রেতা, হকার, পেপার বিক্রেতা থেকে শুরু করে হোলসেল ব্যবসায়ী, পরিবহণ ব্যবসায়ী সকলেই কয়েন নিয়ে জেরবার। কয়েনের বহর বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীও এখন ক্রেতাদের কাছ থেকে কয়েন নিতে চাইছেন না। ফলে ক্রেতারাও সমস্যায়। মালদহের দেশবন্ধু মার্কেটের আনাজ বিক্রেতা আনন্দ মণ্ডল বলেন, নোটবন্দির পর থেকে ক্রেতারা খুচরো দিয়েই যাচ্ছেন। আগে পাইকারি বাজারে মহাজনরা সেই কয়েন নিতেন। কিন্তু গত দু-তিন মাস ধরে মহাজনরা আর কয়েন নিচ্ছে না। ব্যাঙ্কে জমা দিতে গেলে তাঁরাও নিচ্ছেন না। অথচ ক্রেতারা কয়েন দিয়েই যাচ্ছেন।
ইংরেজবাজার শহরের বাজারগুলিতে ঘুরে বাদাম বিক্রি করেন রামু দাস। তিনি বলেন, একশো গ্রাম বাদাম কিনে খুব কম লোকই নোট দেন। কয়েনই হাতে ধরান। আগে যে মুদিখানা থেকে কাঁচা বাদাম কিনতাম তিনি খুচরো নিচ্ছিলেন, কিন্তু এখন কয়েন দেখলেই বাদাম দিতে চান না। সামান্য পুঁজির ব্যবসা, কি করব ভোবেই পাচ্ছি না। খবরের কাগজ বিক্রেতা রঞ্জিত মণ্ডলও জানান, খুচরোর আকালে অসহায় লাগছে।