শিলিগুড়ি হাসপাতালে ছবিটা এমনই। — বিশ্বরূপ বসাক
ডেঙ্গির তথ্য গোপনের মরিয়া চেষ্টায় এ বার জ্বরের রোগীদের মশারিও খুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি এনএসওয়ান পজিটিভ রোগীদের মশারি ছাড়াই রাখা হয়েছে। জ্বর এবং ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীদের সংখ্যা হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে। ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীও রয়েছে ওয়ার্ডে। সে কারণেই সংক্রমণ রুখতে এন এস ওয়ান পজিটিভ অর্থাৎ ডেঙ্গির উপসর্গ থাকা রোগীদের সর্বক্ষণই মশারির নীচে রাখা হচ্ছিল। রোগীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকাল থেকে মশারি খুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ ডেঙ্গির মশা কামড়ায় দিনের বেলাতেই। তাই এমন ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ রোগীর পরিজন থেকে সাধারণ বাসিন্দারা সকলেই।
প্রথম থেকেই ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে। ম্যাক আ্যালাইজা পরীক্ষার রিপোর্টে জীবাণু না মিললে কোনও রোগীকে ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে মানতে চাইছে না স্বাস্থ্য দফতর। সেই রিপোর্ট আসতেই লেগে যায় অন্তত ছ’দিন। শুধু তাই নয় জ্বর আসার দু’তিন দিনের মধ্যে ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করলে, পদ্ধতিগতকারণে তাতে ডেঙ্গির জীবাণু নাও মিলতে পারে।
দ্রুত ডেঙ্গি নির্ণয়ের র্যাপিড টেস্ট করার সুযোগ নেই হাসপাতালে। তবে বাইরে থেকে র্যাপিড কিটে পরীক্ষা করে এনএসওয়ান পজিটিভ অর্থাৎ ডেঙ্গি আক্রান্তদের মশারির নীচে রেখে চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। সে ছবি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিতও হয়েছে। তাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও, ডেঙ্গি আক্রান্তরা যে ভর্তি রয়েছে তা প্রমাণ হয়ে যায়। সেই ‘বিপত্তি’ এড়াতে এবার কর্তৃপক্ষ মশারিই খুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ। সুপার অমিতাভ মণ্ডল অবশ্য দাবি করেছেন ওয়ার্ডে কোনও ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী নেই। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁদের প্রয়োজন সকলকেই মশারি দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।’’
রোগীরা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। প্রধাননগরের গুরুঙ্গ বস্তির বাসিন্দা সাহাবুদ্দিনের রক্তে এনএসওয়ান পজিটিভ জীবাণু মিলেছে। গত কয়েকদিন ধরে তিনি মশারির নীচেই ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁর মশারি খুলে নেওয়া হয়েছে। সাহাবুদ্দিনের কথায়, ‘‘সকালেই মশারি খোলা হয়েছে। মশা কামড়াচ্ছে।’’ হাসপাতালে ভর্তি দশরথপল্লির এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘বাইরে থেকে পরীক্ষায় রক্তে জীবাণু মিলেছে শুনে কয়েকদিন ধরে মশারি টাঙিয়ে রাখা হয়েছিল। এ দিন কিছু না বলেই মশারি খুলে নিল।’’
কালীবাড়ি রোডের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মশারি চাইতে বলল, রাতে দেবে।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, মশারি খুলে দেওয়ার কোনও লিখিত নির্দেশ নেই। তবে মৌখিকভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে জানানো হয়েছে, শুধু রাতের বেলায় মশারি টাঙাতে হবে। এই সিদ্ধান্তে হতবাক চিকিৎসকদের একাংশও। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমি তো প্রেসক্রিপশনেই মশারি টাঙানোর কথা লিখে দিয়েছি। তারপরে কেন হল না জানি না।’’
ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের মশারি ছাড়া রাখা হলে আরও রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই তথ্য গোপন করতে গিয়ে হাসপাতালেই রোগ ছড়ানোর আঁতুরঘর বানিয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির। শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘ডেঙ্গি ধামাচাপা দিতে স্বাস্থ্য দফতর রোগ নিয়ে খেলা শুরু করেছে।’’
মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত জ্বর নিয়ে অন্তত ১৫ জন শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মেডিসিন ওয়ার্ডের পুরুষ বিভাগে মেঝেতে শুইয়ে রোগীদের রাখা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে ওয়ার্ডের ভিতরে স্থান সঙ্কুলান হবে না। সে ক্ষেত্রে করিডরে রোগীদের রাখার ভাবনাচিন্তা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগী বাড়তে থাকায় কেন পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হবে না সে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অভিযোগ, পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করলে রোগের সংক্রমণ চলছে মেনে নেওয়া হবে, তাই পদক্ষেপ করছে না কর্তৃপক্ষ। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘তথ্য গোপনের অভিযোগ কেন হচ্ছে, বুঝছি না। সরকারি নিয়ম মেনেই জানানো হচ্ছে। শিলিগুড়ি পুর এলাকায় গত সপ্তাহে ১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে।’’