হুমকি দিয়ে সাব স্টেশনের কাজ বন্ধের অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতা ফুলচাঁদ গোস্বামীর বিরুদ্ধে। সংবাদপত্রে তা নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে নানা মহলে চাপে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত শুরু হল সাব স্টেশনের কাজ। শামুকতলার পটটোলা গ্রামে প্রস্তাবিত জমিতেই বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ৩৩/১১ কেবি সাব স্টেশন হচ্ছে।
গত সোমবার আলিপুরদুয়ার ২-এর বিডিও সজল তামাঙ্গ, ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক এবং তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার ২ ব্লক সভাপতি পরেশ দাস ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা ওই জমি অধিগ্রহণ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে সাব স্টেশনের কাজ হুমকি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর জেলা নেতৃত্ব নড়েচড়ে বসে। ব্লক নেতৃত্ব কাছে প্রয়োজনে অভিযুক্ত ওই নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ আসে। বিদ্যুৎ ভবন আলিপুরদুয়ার জেলা বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্তাদের ওই নেতার বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেয়। তৃণমূল নেতৃত্বের এমন কড়া মনোভাবের জন্য ওই তৃণমূল নেতা শেষ পর্যন্ত বিরোধিতার পথে থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে দলীয় সুত্রে জানা গিয়েছে।
ওই তৃণমূল নেতা ফুলচাঁদ গোস্বামী অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও সংবাদ মাধ্যমের তৈরি করা বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি কাজ বন্ধ করার জন্য হুমকি বা বাধা দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। তাই পিছিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। তিনি বলেন, ‘‘ওই জমিটিতে গত দুই দশক ধরে একটি পরিবার চাষ আবাদ করছে। ওই জমি চাষ করে ওদের সংসার চলে। ওই পরিবারটি পথে বসে যাবে দেখেই ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আলোচনার মাধ্যমে ওই পরিবারকে বাঁচিয়ে জমি অধিগ্রহণের আর্জি জানিয়েছিলাম। বিদ্যুৎ ও ভূমি দফতর ওই পরিবারকে যথাসাধ্য সাহায্যের আশ্বাস দেওয়ায় আমরা জমি অধিগ্রহণে বিদ্যুৎ দফতরকে রীতিমত সাহায্য করেছি। অথচ সংবাদ মাধ্যম এই ঘটনাকে বিকৃত করে ছেপেছে। প্রকল্পটি হোক সেটা প্রথম থেকে চেয়েছিলাম।’’
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, বিষয়টি জানার পরে তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী নিজেই শামুকতলা আসতে চেয়েছিলেন। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের কোনও উন্নয়ন মূলক কাজ আমাদের দলের কোনও নেতার বাধায় আটকে যাবে, এটা মানা হবে না। আমি নিজে শামুকতলা যেতে চেয়েছিলাম। ব্লক সভাপতি বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেওয়ায় আমি আর যাইনি। তবে শেষ পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ হয়েছে জেনে ভাল লাগছে। সাব স্টেশনের কাজ যাতে দ্রুত শুরু হয় সে ব্যাপারে বিদ্যুৎ মন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাব।”
বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা সুত্রে জানা গেছে, আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উন্নত বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে শামুকতলায় ৩৩/১১ কেবি সাব স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন দেয় রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর। সে জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ভূমি রাজস্ব দফতরের কাছে প্রয়োজনীয় জমি চাওয়া হয়। সে জন্য ভূমি দফতর শামুকতলা-আলিপুরদুয়ার রাজ্য সড়কের পাশে পটটোলা ৭৯ ডেসিমেল জমিতে সাবস্টেশন স্থাপনের জন্য দুই সপ্তাহ আগে বিদ্যুৎ সংস্থার কর্মীরা মাটি পরীক্ষা করতে গেলে স্থানীয় তৃণমূল নেতা ফুলচাঁদ গোস্বামীর হুমকিতে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, জমিটি স্থানীয় যে পরিবারের দখলে রয়েছে, তাঁদের উচ্ছেদ করে অধিগ্রহণ করা হলে রক্তগঙ্গা বইবে বলে দলীয় পতাকা দেখিয়ে হুমকিও দেন তিনি। হুমকির জেরে কাজ বন্ধ করে চলে যায় বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা এবং শামুকতলা অঞ্চল তৃণমূল নেতারা এর বিরুদ্ধে সরব হন।
বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল ম্যানেজার দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘‘স্থানীয় এক নেতার হুমকিতে আমরা কাজ বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে সকলের সহযোগিতায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। শীঘ্রই সাব স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’’ তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার ২ ব্লক সভাপতি পরেশ দাস বলেন, ‘‘জেলা সভাপতির নির্দেশ পেয়ে জমি অধিগ্রহণে সহযোগিতা করেছি। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের কাজ কোনও ভাবে বন্ধ হোক সেটা চাই না।’’