ফাইল চিত্র।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে। তারপর থেকেই তিনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও আধিকারিক নিয়োগে টাকা লেনদেনের অভিযোগে সুর চড়াতে শুরু করেছে বিরোধীরা। পার্থ শিক্ষামন্ত্রী ও অনিল ভুঁইমালি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন সময়কালে নিয়োগের বিনিময়ে ওঠা টাকা অনিলের হাত ঘুরে পার্থর কাছে পৌঁছেছিল বলে বিরোধীদের সন্দেহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সঞ্চারি রায় মুখোপাধ্যায় ও রেজিস্ট্রার দুর্লভ সরকার এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
২০১৩ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পার্থ গবেষণা (পিএইচডি) সম্পূর্ণ করেন। তাঁকে গবেষণার পথ দেখান(গাইড) তৎকালীন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক অনিল। ২০১৫ সালে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পর সেই অনিলকেই ওই রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য করে রাজ্য শিক্ষা দফতর। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে অনিলকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। অনিল উপাচার্য থাকাকালীন ছয় বছরে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক ও আধিকারিক মিলিয়ে ৫০ জনেরও বেশি জনকে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর।
উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত ও বিজেপির জেলা সহ সভাপতি নিমাই কবিরাজের অভিযোগ, নিয়ম না মেনে পার্থকে গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন অনিল। সে কারণে, ‘গুরুদক্ষিণা’ হিসেবে পার্থ অনিলকে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে বসান। তাঁদের দাবি, অনিল রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন তাঁর হাত ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেআইনি ভাবে শিক্ষক ও আধিকারিক নিয়োগের বিনিময়ে ওঠা টাকা পার্থর কাছে পৌঁছেছে বলে তাঁদের সন্দেহ।
মোহিত বলেন, “আমি বিধায়ক থাকাকালীন বিধানসভাতে ও রাজ্যপালের কাছে অনিলবাবু ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই হয়নি।” নিমাই বলেন, “পার্থবাবুর গ্রেফতারির সূত্র ধরে ইডির উচিত অনিলবাবু উপাচার্য থাকাকালীন সময়কালে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার তদন্ত করা।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম পাল বলেন, “পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও আধিকারিক নিয়োগের বিনিময়ে অনিলবাবুর তোলা টাকাও রয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ।” জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের বক্তব্য, “এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।”
অনিল ফোন ধরেননি। হোয়্যাটসঅ্যাপেও জবাব মেলেনি। তবে অনিলের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য পার্থর সঙ্গে অনিলকে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। পার্থ নিয়ম মেনেই গবেষণা শেষ করেছেন।