এ ভাবে স্কুল বন্ধে ক্ষতি হবে পড়ুয়াদের, মত শিক্ষা মহলের। নিজস্ব চিত্ত
তীব্র গরমের কারণ দেখিয়ে সোমবার থেকে আগামী সাত দিনের জন্য স্কুল, কলেজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়েও ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এই ছুটি যে পড়ুয়াদের কোনও কাজে দেবে না, বরং ক্ষতিই হবে, সে কথা নির্দ্বিধায় জানাচ্ছেন উত্তরবঙ্গের শিক্ষক থেকে পড়ুয়া, অভিভাবকদের একটা বড় অংশ। তাঁদের দাবি, এ বছর গরম পড়লেও দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে গরম কিছুটা কম। পড়ুয়াদের গরম থেকে দূরে রাখতে উত্তরের জেলাগুলিতে তাই সকালে স্কুল করাই যেত। কিন্তু একেবারেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে দীর্ঘ স্কুল ছুটির পর এখনও পড়ুয়ারা পরীক্ষা দিতে সমস্যায় পড়ছে। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির জেরে বেশ কিছু স্কুলে পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছিল। তা এখনও শেষ হয়নি। ওই স্কুলগুলির পরীক্ষা আরও পিছিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ, সাত দিন পরে গরম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে। বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি অবশ্য এখনই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার বদলে সকালে স্কুল করার পক্ষে মত দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা না-করেই সরকার নিজেদের খেয়াল মতো বন্ধ করায় সমস্যা বাড়বে।
পশ্চিম ফালাকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সোমবার থেকে প্রথম পর্বের পরীক্ষা ছিল। তা পিছোতে হবে। মালদহে আজ, সোমবার থেকে গরমের জন্য প্রাথমিক স্কুল সকালে ঘোষণা করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। তবে রাজ্য সরকার গরমের জন্য স্কুল ছুটির ঘোষণা করেছে। শিক্ষকদের একাংশের দাবি, আগের বছরও এই কারণেই সিলেবাস শেষ করতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ছুটি ঘোষণায় অভিভাবক হবিবপুরের মেনকা সিংহ বলেন, “গরমের জন্য স্কুল সকালে করাই ঠিক ছিল। বন্ধ থাকলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষতি।”
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েরর গ্রামীণ মৌসম সেবা কেন্দ্রের নোডাল অফিসার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা বাড়বে। অনেকের মতে, উত্তরবঙ্গে গরম থাকলেও দিনভর হালকা হাওয়া বইছে। তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে না। কাজল ভৌমিক, রায়গঞ্জের পালপাড়ার তারা পালের কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গে এখনও অসহ্য গরম পড়েনি। মে, জুন মাসে প্রচণ্ড গরম পড়বে। ফলে, এখন স্কুল বন্ধ থাকলে, প্রচণ্ড গরমে ফের স্কুল ছুটি হবে। সব মিলিয়ে পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষতি হবে।’’ অভিভাবকদের অনেকেরই দাবি, উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে কিছুদিনের মধ্যেই পরীক্ষা হওয়ার কথা।
পশ্চিম ফালাকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষক নিতাই দত্ত বলেন, “পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা হলেও আমাদের সমস্যায় পড়তে হল।” শিলিগুড়ি মহকুমার মুরালিগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে সকালে স্কুল করা যেতেই পারত। সাধারণ ঘরের ছেলে মেয়েরাই সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ে।’’ রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর এলাকার সারদা শিশুতীর্থের প্রধান শিক্ষক শান্তনু সেনের কথায়, তাদের বেসরকারি স্কুলেও সরকারি নির্দেশ মানতে হয়। বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলো ছুটি নিয়ে সরব হয়েছে।
তবে উত্তরবঙ্গের আইসিএসই ও সিবিএসই বোর্ডের স্কুলগুলির তরফে এ দিন বিকেলের দিকে জানানো হয়, তারা স্কুল খোলা রাখবে। কিন্তু রাতের দিকে তারা জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে আজ, সোমবার থেকে এক সপ্তাহ তাদের সব স্কুল বন্ধ থাকবে।