জলভাসি: গীতালদহের বামনপাড়ায়। ছবি: সুমন মণ্ডল
গতি কমে এলেও বৃষ্টি চলছেই। বাড়ছে নদীর জলও। একাধিক নদী বাঁধের অবস্থা খারাপ। শুক্রবার নতুন করে কালজানি নদীর আর একটি বাঁধ ক্ষতির মুখে পড়ে। এ দিন সকালে ওই বাঁধের সংস্কারের কাজ খতিয়ে দেখতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বৃহস্পতিবার বলরামপুরে কালজানি নদীর বাঁধ একাধিক জায়গায় ধসে পড়ে। তড়িঘড়ি সেগুলি মেরামতির কাজ শুরু করা হয়।
এই অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। জেলার অন্য নদী বাঁধের কী অবস্থা তা নিয়েও খোঁজ শুরু হয়েছে। মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান জানান, প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের দিনের ২৬২ মিলিমিটারের পরে এ দিন ফের কোচবিহারে ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। মাথাভাঙায় ১৩৫ মিলিমিটার, দিনহাটায় ৭৭ মিমি এবং মেখলিগঞ্জে ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তুফানগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৩২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ওই বৃষ্টির জন্য একাধিক নিচু জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। আমন ধান চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় ধানের বীজতলা জলের নীচে চলে গিয়েছে। আরও বৃষ্টি হলে সেগুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কৃষক নন্দ বর্মণ বলছেন, “একাধিক জমিতেই জল জমে গিয়েছে। এই সময়ে অল্প জল হলে চাষের পক্ষে সুবিধা হয়। জল বেশি হলে চাষে লোকসানের আশঙ্কা থাকে। আপাতত বেশি জল হওয়ায় আমরা
আশঙ্কায় আছি।”
কোচবিহার এমনিতেই নদী দিয়ে ঘেরা। তোর্সা, তিস্তা ছাড়াও মানসাই, কালজানি, ধরলা, রায়ডাক ছাড়াও একাধিক নদী রয়েছে। প্রতি বছর নদীর জল বাড়তে শুরু করলেই ভাঙনের কবলে পড়েন বাসিন্দারা। তোর্সা, ধরলা, মানসাই নদীর ভাঙনে বহু মানুষ এখন পর্যন্ত গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। হাজার হাজার বিঘের কৃষি জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে।
এই অবস্থায় ফের নদীর জল বাড়তে শুরু করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই বাসিন্দারা। তাঁদের কয়েকজনের কথায়, “একবার জল বাড়তে শুরু করলে ভাঙন হয়। আর একবার জল কমতে শুরু করলে ভাঙন হয়। দু’বারে আমাদের সর্বস্ব নিয়ে নেয় নদী।”
এই অবস্থার মধ্যে ফ্লাড শেল্টারগুলি তৈরি রাখা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মণ বলেন, “ফ্লাড শেল্টার তৈরি আছে। কেউ আশ্রয়হীন হলে তাঁর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তাই আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।”