প্রতীকী ছবি।
করোনা চিকিৎসায় একই ছাদের তলায় সরকারি এবং বেসরকারি পরিষেবা চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে শিলিগুড়িতে। এতে বিপদের আশঙ্কা করছেন সাধারণ বাসিন্দা থেকে প্রশাসনের কর্মী-আধিকারিকদের অনেকেই।
বর্তমানে শিলিগুড়িতে দু’টি নার্সিংহোমের পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে সরকার সেখানে রোগীদের বিনা খরচায় পরিষেবা দিচ্ছে। এই বাবদ খরচও অবশ্য রাজ্য সরকার দুই নার্সিংহোমকেই দিচ্ছে বলে খবর। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ মোট শয্যার একটি অংশ নার্সিংহোমের অধীনে রেখে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট খরচ নিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থায় কোভিড চিকিৎসা পরিষেবা দিতে চান। কাওয়াখালি কোভিড হাসপাতাল যে নার্সিংহোম, তার মালিকপক্ষ এই প্রস্তাব দিয়ে আবেদনও করেছেন। যা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনাও চলছে। এই প্রস্তাবের মূল কথা, যাঁরা অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে চান, তাঁরা সেখানে ভর্তি হবেন। যাঁরা বিনা খরচায় সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা পেতে চান, তাঁরা হাসপাতালের সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার অধীনে ভর্তি হবেন। রোগীর পরিবারের ইচ্ছের উপরেই তা নির্ভর করবে। প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দফতরে একাংশ, এমনকি সাধারণ বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন— এমনিতেই নার্সিংহোমগুলির একাংশ করোনা রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের বিল করছে। সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা করার নামে এক রাতে ৮০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। কোভিড হাসপাতালে একই ছাদের তলায়, একই পরিকাঠামো ব্যবহার করে দু’রকম চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হলে তাতে দুর্নীতি এবং অনিয়মের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে না? সরকারি ব্যবস্থায় শয্যা নেই বলে বেসকারি পরিষেবার দিকে রোগীদের ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলাশাসক এস পুন্নমবলম বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে এরকম প্রস্তাব এসেছে। প্রশাসন সব দিক খতিয়ে দেখছে। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় যাতে কোনও রকম প্রভাব না পরে, সেটা নিশ্চিত হলে তবেই তা হতে পারে।’’ প্রশাসন এবং নার্সিংহোমের একটি সূত্রের খবর, বর্তমানে কাওয়াখালি কোভিড হাসপাতালে ১১৫টি শয্যা রয়েছে। পুরোটাই সরকারি ব্যবস্থায় পরিষেবার কাজে লাগছে। শয্যা বাড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে তার পরে সব মিলিয়ে ৬০টি শয্যা নিজেরা চালাতে চাইছেন। সরকারি ব্যবস্থায় ১০০টি শয্যা থাকবে। মাটিগাড়া কোভিড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও প্রস্তাব না দিলেও তাঁরাও একই বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে কথা বলা শুরু করেছেন। তাতেই সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ভবিষ্যতে কী অবস্থায় দাঁড়াবে, সেটা নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। শিলিগুড়ি ওয়েল ফেয়ারের সহ-সভাপতি দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘করোনার চিকিৎসায় একই ছাতার তলায় সরকারি এবং বেসরকারি পরিষেবা দেওয়ার যে ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে, তাতে সরকারি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েই রোগী টানবে নার্সিংহোম। এবং টাকা লুটবে।’’ তাঁদের দাবি, তাই নার্সিংহোম হোক বা হাসপাতাল, সরকারি ব্যবস্থায় পুরোপুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা দরকার। দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘এমন কিছু করা হবে না, যাতে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়।’’