আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে উত্তরবঙ্গের সব নদী বাঁধের সংস্কারের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরই প্রাক বর্ষার সংস্কার কাজ সারার আগেই বর্ষা শুরু হয়ে যায়। নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠে সদ্য ফেলা বোল্ডার, তারজালি, বালির বস্তা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই প্রবণতা এড়াতে এবার ১৫ জুনের মধ্যে উত্তরবঙ্গ জুড়ে নদী বাঁধ মেরামতি এবং সংস্কার করে সেচমন্ত্রীর দফতরে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্ষার শুরুতেই সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদী বাঁধ পরিদর্শনে আসতে পারেন বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ন্ত্রণের দিকটা মন্ত্রী নিজেই দেখছেন বলেও জানা গিয়েছে।
সরকারি ভাবে সেচ দফতর জুন মাসের প্রথম দিনটিকেই উত্তরবঙ্গে বর্ষার শুরু বলে ধরে থাকে। সেই মতো এবারেও আগামী সোমবার থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কন্ট্রোল রুম শুরু হচ্ছে। জলপাইগুড়িতে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম হচ্ছে। শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারেও কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির খবরাখবর পেতে হেল্প-লাইন নম্বর চালু হবে। গত বছরের মতোই এবারও নদীর জল বেড়ে যাওয়া, অথবা বাঁধের পরিস্থিতির উপর নজরদারির জন্য ‘সাইকেল ম্যাসেঞ্জার’, ‘ওয়াচার্স’ থাকছে। এ বছর ‘ম্যাসেঞ্জারে’র সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে। যদিও, সেচ দফতরের বাস্তুকারদের একাংশের দাবি, বাঁধ সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ না হলে বন্যা পরিস্থিতি রোখা সম্ভব নয়।
গত বছর উত্তরবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টির ঘাটতি থাকায় কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল সেচ দফতর। এ বছর বর্ষার আগে থেকেই উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমে ক্রমাগত ঘুর্ণাবর্ত এবং একের পর এক নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হওয়ায় তেমন পরিস্থিতি হবে না বলেই আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ঝুঁকি না নিয়ে প্রাক বর্ষা সংস্কারের কাজ আগেই সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দফতর।
গত ১৯ মে উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রাক বর্ষা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছে। সেই বৈঠকেই দ্রুত কাজ সারার নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত বলেন, ‘‘প্রাক বর্ষার সংস্কার এবং মেরামতির কাজ আগে শেষ হয়ে গেলে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়। সে কারণেই সেচ দফতরের বিভিন্ন বিভাগকে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। কোথায় কাজের কী পরিস্থিতি চলছে তা নিয়েও রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।’’ মূলত জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়া বাঁধগুলির সংস্কার করা, গত বছর যে সব নদীতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেগুলির বাঁধ মজবুত করা এবং বিভিন্ন বাঁধের রেনকাটের ফাটল বোজানোর কাজ চলছে বলে গৌতমবাবু জানিয়েছেন।
প্রতিবছরই তিস্তা, কালজানি, রায়ডাক, তোর্সার মতো বড় নদীগুলি নিয়ে আশঙ্কায় থাকে সেচ দফতরের আধিকারিকরা। ডুয়ার্সের চেল, ঘিস, ডায়না, নেওড়ার মতো নদীগুলিও বর্ষার সময়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এ বছর মহানন্দা নদীতেও প্রাক বর্ষার কাজ চলছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার শহর রক্ষাকারী তিস্তা-তোর্সা নদী বাঁধের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ওই বাঁধগুলিতে সংস্কার কাজ চলছে। মেঘলিগঞ্জ, রংধামালি এলাকাতেও বাঁধ মজবুত করার কাজ চলছে। সেবকের চুমকডাঙিতেও বন্যা পরিস্থিতি প্রতিরোধের কাজ চলছে বলে দফতর জানিয়েছে।
এ বছর প্রাক বর্ষার সংস্কারের কাজের জন্য প্রায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পাহাড়ে এবং সমতলে একসঙ্গে বৃষ্টি শুরু হলেই, নদী-ঝোরা ফুলে ফেঁপে উঠে উত্তরবঙ্গ জুড়েই বন্যা পরিস্থিতি তৈরির প্রবণতা দীর্ঘদিনের। সঠিক সময়ে নদী বাঁধ, পাড় সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ না হওয়াতেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আগাম সতর্ক হয়ে উত্তরবঙ্গে এই প্রবণতা আদৌও বদলালো কিনা তা অবশ্য সময়ই বলবে।