বরাবর শাসক বিরোধী চাঁচলে বঞ্চনার আশঙ্কা

মালদহের চাঁচলে নির্বাচনী প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এলাকার উন্নয়ন চাইলে আমাদের প্রতিনিধিদের তো বিধানসভায় পাঠাতে হবে। কোথায় কী করতে হবে তা তো ওদের চোখ দিয়েই আমি দেখব।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০২:১৮
Share:

মালদহের চাঁচলে নির্বাচনী প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এলাকার উন্নয়ন চাইলে আমাদের প্রতিনিধিদের তো বিধানসভায় পাঠাতে হবে। কোথায় কী করতে হবে তা তো ওদের চোখ দিয়েই আমি দেখব।’’

Advertisement

কিন্তু নির্বাচনে চাঁচল মহকুমার চারটি আসনে শাসক দলের কোনও প্রার্থীই জয়ের মুখ দেখেননি। ফলে দেড় দশক ধরে খুঁড়িয়ে চলা চাঁচল মহকুমার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো থেকে শুরু করে পুরসভা তো বটেই, এলাকার উন্নয়ন কতটা গতি পাবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

দীর্ঘ বাম আমলেও অধিকাংশ সময়েই শাসক বিরোধিতার পথেই হেঁটেছে চাঁচল। আবার তৃণমূল জমানাতেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ফলে শাসকদল চাঁচলের উন্নয়ন নিয়ে কতটা মাথা ঘামাবে, নাকি বাম আমলের মতোই শাসকের সুনজর থেকে ফের বঞ্চিতই থেকে যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

যদিও এই প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের দাবি, ‘‘আগেও তো আমাদের কোনও বিধায়ক ছিলেন না, তাই বলে মুখ্যমন্ত্রী কি চাঁচলকে বঞ্চিত করেছেন? কিসান মান্ডি, সুপার হাসপাতাল-সহ অনেক কাজ হয়েছে। এ বারও হবে।’’

কিন্তু দেড় দশক পার করে আসা মহকুমা সদরের কতটা উন্নয়ন হয়েছে? দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০০১ সালে চাঁচল মহকুমা তৈরি হয়। শাসকদলের বিধায়ক না থাকায় চাঁচলকে মহকুমার প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না বলে তখন বারেবারেই অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু আন্দোলনের চাপে মহকুমার ঘোষণা করা হলেও এক দশক ধরে হাত গুটিয়েই ছিল তত্কালীন বাম সরকার বলে অভিযোগ। যার জেরে মহকুমার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামোও গড়ে ওঠেনি। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০১০ সালের ১৬ জুলাই আন্দোলনের চাপেই ফের চাঁচলকে পুরসভা করা হল বলে ঘোষণা করে বামেরা। কিন্তু তারপরেই বামেদের বিদায়ের পরে শাসকের জায়গা দখল করে তৃণমূল। ২০১৪ সালের ১১ জুন তৃণমূল সরকারের তরফেও ফের চাঁচলকে পুরসভা করা হল বলে ঘোষণা হয়। ওই পর্যন্তই।

প্রশাসন সূত্রেই জানা যায়, একটা মহকুমার অন্যতম অঙ্গ আদালত, হাসপাতাল। কিন্তু মহকুমা তৈরির পরে চাঁচলে আদালত গড়তে গড়িয়েছে পাক্কা ১২ বছর। আবার ২০১২-য় আদালত হলেও সংশোধনাগার এখনও হয়নি। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জজ কোর্ট চালু হয়নি। চালু হয়নি মহকুমা হাসপাতাল। মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের অফিস নেই। পরিবহন দফতর চালু হলেও এআরটিও নেই। নেই খাদ্য দফতর। ১৬ বছরেও মহকুমার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো গড়ে না ওঠার পিছনে তাই বঞ্চনারই ছায়া দেখছেন বাসিন্দারা।

আর সর্বোপরি সেই পুরসভা। একটা মহকুমা সদর চলছে গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। ফলে নাগরিক পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বেহাল দৈনিক বাজার, নিকাশি নালা, রাস্তাঘাট। বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়নি, নেই পথবাতি। সামান্য বৃষ্টিতেই জলে ভাসে শহর। গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশাপাশি প্রশাসনেরও দাবি, পুরসভা না হলে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।

কী হল দুবার ঘোষিত পুরসভার? চাঁচলের মহকুমাশাসক পুষ্পক রায় বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এখনও সরকারি কোনও নির্দেশ পাইনি।’’

বিরোধী কংগ্রেস বারবার চাঁচলের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে। পথে নেমে আন্দোলন করতেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু দাবি আদায় করতে আন্দোলনের যে ধার হওয়া উচিত, তা কখনওই দেখা যায়নি বলে দলের একাংশ সূত্রেই দাবি উঠেছে। এ বার ফের পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী। ফলে এবার কংগ্রেস অন্তত দাবি আদায়ে প্রথম থেকেই পথে নেমে সক্রিয় আন্দোলন করবে বলে আশায় শহরবাসী।

চাঁচল ও মালতীপুরের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুব ও আলবেরুনি জুলকারনাইন এক সঙ্গেই বলেন, সরকার না চাইলে প্রশাসন আর কী করবে। তবে এ বার দাবি আদায়ে লাগাতার আন্দোলন হবে।

জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী তথা উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম নুরও বলেন, ‘‘মালদহের মানুষ কংগ্রেসে আস্থা রেখেছেন। তার মর্যাদা দিতে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement