আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে বীণাদেবী।—নিজস্ব চিত্র।
বনকর্মীদের উপর আক্রমণ হওয়ায় শূন্যে গুলি চালানো হয়েছিল বলে দাবি করলেন বনকর্তারা। শুক্রবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের জেপি ৪ কর্ম্পাটমেন্টে বনকর্মীদের ছোড়া ছররা গুলিতে গুরুত্বর জখম হন এক মহিলা। বনকর্মীদের ব্যাখ্যা শুনে আহতের পরিজনদের প্রশ্ন, শূন্যে গুলি চালালেও কী ভাবে ওই মহিলা আহত হলেন?
অভিযোগ, গুলি চালানোর পরেও বনকর্মীরা পড়ে থাকা ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করেননি। পরিবারের লোকরা রক্তাক্ত অবস্থায় ওই মহিলাকে প্রথমে মাদারিহাট স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পরে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
কী কারণে বনকর্মীরা গুলি চালালেন তা নিয়ে ঘটনার পর থেকেই তোলপাড় শুরু হয়। শনিবার জলদাপাড়ার বন্যপ্রাণী সহায়ক বিমল দেবনাথ জানান, নর্থ রেঞ্জের ৪ নম্বর কর্ম্পাটমেন্টে কিছুদিন ধরেই গাছ কাটা হচ্ছিল। সেখানে নজর রাখছিলেন বনকর্মীরা। শুক্রবার বিকেলে বনকর্মীরা সেখানে দেখেন ১৫-২০ জনের পুরুষ মহিলার একটি দল গাছ কাটছে। বনকর্মীরা বারণ করলে উল্টে বিট অফিসারের বন্দুক নিয়ে টানাটানি শুরু করে কাঠচোরেরা। কায়লা ছেত্রী নামে এক বনকর্মীকে মারধরও করা হয় বলে বিমলবাবুর দাবি। সেই সময় বিট অফিসার হরিপ্রসাদ যোশী শূন্যে গুলি চালান। কাঠচোরের দলটি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে মাদারিহাটি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
বন দফতরের এই ব্যাখ্যা অবশ্য মানতে চাননি প্রত্যক্ষদর্শী কাঞ্চন দাস। ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমার দিদি বীণা বিশ্বাসকে নিয়ে আমি বিকেলে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন জঙ্গলে শুকনো কাঠ কুড়োতে যাই। কাঠ জোগাড় করে একজায়গায় রেখেছিলাম। দূরে কেউ গরু চরাছিল। হঠাৎ দেখি জঙ্গল থেকে হাতির পিঠে চড়ে বনকর্মীরা আসছে। আমি দিদিকে বলি চলে যাওয়ার কথা। আমি শুকনো কাঠ ছেড়ে দৌড় লাগাই। সেই সময় পটকা ফাটানোর আওয়াজ পাই। কিছু পরে দিদির চিৎকার শুনতে পাই। ‘মরে গেলাম’ বলে ও চিৎকার করছিল।’’ তিনি দাবি করেন, আতঙ্কে তিনি জঙ্গলের রাস্তা অবধি ভুলে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘চিৎকার শুনে জামাইবাবু ও অন্যলোকেরা ছুটে আসে। আমার ফের ওই জায়গায় গিয়ে দেখি দিদি পড়ে আছে।’’
বীণাদেবীর স্বামী ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘জঙ্গলে ঢুকে দেখি একটি ঝোপের ভেতর স্ত্রী উপুড় হয়ে পড়ে আছে। পোশাক রক্তে ভিজে গিয়েছে। আমারাই ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ওর পায়ে, পিঠে ও পেটে ছররা গুলি লেগেছে।’’ আলিপুরদুয়ার হাসপাতাল সূত্রে জানাগিয়েছে, বীণা দেবীর অবস্থা স্থিতিশীল।