অসহায়: পা বাঁধা সেই বৃদ্ধা।
শীতের রাতে রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক বৃদ্ধা। ধীর গতিতে হাঁটার পাশাপাশি একটি শব্দও হচ্ছে শুনে অনেকে ঘুরে দেখছিলেন বৃদ্ধাকে। দেখতে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ অনেকের! বৃদ্ধার পায়ে বেড়ি পড়ানো রয়েছে!
মেখলিগঞ্জ ব্লকের জামালদহ এলাকার ঘটনা। সভ্য সমাজে এভাবে পায়ে শিকল দিয়ে বৃদ্ধা কেন রাস্তায় হাঁটছেন তা ভেবে হতবাক সকলেই। প্রাথমিকভাবে স্থানীয়দের সন্দেহ, ওই বৃদ্ধাকে তাঁর বাড়ির লোকজন বের করে দিয়েছেন। রাতেই এই ঘটনার কথা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে পৌঁছয়। কিন্তু সোমবার সকাল হতেই হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যান ওই বৃদ্ধা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার কয়েকজন জানান, বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার নাম করে ওই বৃদ্ধাকে এ দিন সকালে একটি টোটোয় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এরপর থেকে আর ওই বৃদ্ধার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই বৃদ্ধার নাম হরিশোভা সরকার। বাড়ি চ্যাংরাবান্ধা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চিতিয়ারডাঙ্গা এলাকায়। তাঁর স্বামীর নাম সুখলাল সরকার। বাড়িতে তাঁর দুই ছেলেও রয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, হরিশোভা মানসিক ভারসাম্যহীন। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যান। সেই কারণে পায়ে শিকল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবারের লোকজন এ কথা বললেও ওই বৃদ্ধার বাড়ি থেকে জামালদহের দূরত্ব ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার। প্রশ্ন উঠেছে, এতটা পথ কীভাবে ওই বৃদ্ধা হাঁটলেন।
তবে এমন ঘটনার খবর শুনে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নিন্দা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসন ও মেখলিগঞ্জ মহকুমা আইনি পরিষেবা কমিটির তরফেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এ দিন দুপুর থেকেই ওই বৃদ্ধার খোঁজ শুরু করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আইনি পরিষেবা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে। পরে বহরমপুরে হোমে পাঠানো হতে পারে।
এই ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জমা পড়লে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। দার্জিলিং জেলা লিগাল এইড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, ‘‘তাঁদের কাছে খবর আছে ওই বৃদ্ধাকে তাঁর পরিবারের লোকজন পায়ে শিকল দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।’’ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনকেও জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, দ্রুত ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।