প্রতীকী ছবি।
ছেলেধরা গুজবের পর এ বার ডাইন অপবাদ। যার জেরে ফের গণপিটুনির ঘটনা ঘটল আলিপুরদুয়ারে। শনিবার সকালে শামুকতলা থানার শ্রীনাথপুর চা বাগানে ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ, মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধাকে এমন মার দেওয়া হয় যে, পাথরে পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে যায় তাঁর। তবে এলাকার বাসিন্দাদের একটি অংশ রুখে দাঁড়ানোয় শেষ পর্যন্ত রক্ষা পান ওই বৃদ্ধা। তাঁকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলার পুলিশ কর্তারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, গণপিটুনির শিকার হওয়া ষাট বছরের ওই বৃদ্ধার নাম সুনিয়ারো ওরাওঁ। বাড়ি শ্রীনাথপুর চা বাগানের চার হালিয়া লাইনে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই একই এলাকার বাসিন্দা আরেক বৃদ্ধা দীর্ঘদিন থেকে জন্ডিসে ভুগছেন। অভিযোগ, সম্প্রতি এলাকার কিছু মানুষের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে বৃদ্ধা সুনিয়ারোর জন্যই জন্ডিস হয়েছে। আরও অভিযোগ, তার পরেই ডাইন অপবাদ দিয়ে শনিবার সকালে সুনিয়ারোকে ধরে মারধর করে একদল বাসিন্দা। মাথা ফেটে যায় বৃদ্ধার। তখনই এলাকার একদল বাসিন্দা মারধরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এর পর বৃদ্ধাকে শ্রীনাথপুর চা বাগানের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা হয়।
স্থানীয় মাঝেরডাবরি চা বাগানের প্রধানের স্বামী তথা তৃণমূল নেতা মানস রায় বলেন, ‘‘সুনিয়ারো অনেক দিন থেকে মানসিক রোগে ভুগছেন। এলাকার বাসিন্দারা প্রত্যেকেই তাঁকে চেনেন। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে তাঁর কোনও কাজ দেখে স্থানীয়রা তাকে ডাইন বলে সন্দেহ করেন। বিষয়টি যে ঠিক নয়, তা আমরা বাসিন্দাদের বুঝিয়েছি।’’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান শ্রীনাথপুর চা বাগানের ম্যানেজার সফিউল হক। ডাইন নিয়ে কাউকে সন্দেহ করা যে আসলে কুসংস্কার, তিনিও বাসিন্দাদের তা বোঝান।
জুন মাসের গোড়া থেকে ছেলেধরা গুজবে আলিপুরদুয়ারে একের পর এক গণপিটুনি ঘটনা ঘটে। জুলাই মাসের শেষ দিকে তাসাটি চা বাগানে এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়। তার পর থেকে ছেলেধরা গুজব খানিকটা কমলেও, এ বার ডাইন অপবাদে এক বৃদ্ধাকে মারধরের ঘটনা নতুন করে চিন্তায় ফেলতে শুরু করেছে প্রশাসনকে। এ দিনের এখনও পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের না হলেও, বিষয়টিকে হাল্কাভাবে দেখছেন না জেলার পুলিশকর্তারা। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’