চলছে বালির অবৈধ কারবার। নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ দিনাজপুরে অধিকাংশ ঘাটে বালি তোলার নিলাম বন্ধ। অভিযোগ, বাজারের চাহিদা মেটাতে বেআইনি ভাবে নদী থেকে বালি তুলছে ‘বালি পাচারকারীরা’। শনিবার গঙ্গারামপুরে বালি তোলার কাজের তল্লাশিতে গিয়ে বালির ‘অবৈধ’ কারবারিদের বাধার মুখে পড়লেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরা। পরে, পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে।
মহকুমাশাসক (গঙ্গারামপুর) পি প্রমথ বলেন, ‘‘ঘাট বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তাই বলে অবৈধ কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। নদীর ঘাটে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মোট ৬৪টি সরকারি বালি-ঘাট রয়েছে। জেলার আত্রেয়ী, পুনর্ভবা ও টাঙন নদীর এই ঘাটগুলি থেকে বালি তোলা যায়। আগে জেলাশাসকের দফতর থেকে ঘাটের নিলাম হত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে, রাজ্যের ‘মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। সেই নিলামে জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়ে ঘাট লিজ়ে নিচ্ছেন। তাঁদের মাধ্যমে জেলার ব্যবসায়ীরা বালি তুলছেন। ভোট ঘোষণার আগে, জেলার মাত্র চারটি ঘাটের নিলাম হয়েছিল। নির্বাচনী আচরণবিধি বলবৎ হওয়ায় বাকি ৬০টি ঘাটের নিলাম হয়নি।
এ দিকে বাজারে নির্মাণ কাজের জন্য প্রতিদিনই বালির চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু জেলায় বালি তোলায় ঘাটতি থাকার কারণে, ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা প্রতি ট্রাক্টরে বালির দাম বেড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অতিরিক্ত দামের আশায়, নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা শুরু হয়েছে।
এ দিন গঙ্গারামপুরের পুনর্ভবার ঘাটে তল্লাশিতে গিয়ে কয়েকটি ট্রাক্টর আটকান ভূমি সংস্কারের কর্মীরা। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বালির কারবারিদের বচসা হয় বলে অভিযোগ। ওই সরকারি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও লোকবল না থাকায় অবৈধ বালির কারবারে ‘জড়িতেরা’ ট্রাক্টর-সহ পালিয়ে যায় বলে প্রশাসনের দাবি।
বালি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এমন কিছু ঘাট রয়েছে যেখানে নদীর পার ভেঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিজস্ব জমিতে বালি জমে। তাঁদের দাবি, সে বালি সরকারের নয়। কিন্তু সেই বালি তুলতে গেলেও ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের বাধার মুখে পড়ছেন। এক বালি ব্যবসায়ী ভবেশ সরকার বলেন, ‘‘সরকারকে কর দিয়ে বালি তুলি। কিন্তু বালি তোলার জন্য এখন নানা রকম নিয়ম করা হয়েছে। বলছে, দু’ঘণ্টার বেশি বালি তোলা যাবে না। কারও ব্যক্তিগত জমি থেকেও বালি তোলা যাবে না। এ সব কারণে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’’
মহকুশাশাসক (গঙ্গারামপুর) বলেন, ‘‘আইন মেনে কর দিয়ে বালি তোলা হলে, কাউকেই কোনও হয়রানি করা হয় না। কিন্তু নিয়মের বাইরে গিয়ে বালি তুললে ব্যবস্থা নিতেই হবে। ভবিষ্যতেও তল্লাশি চলবে।’’