অভিযুক্ত নার্সিংহোম

চিকিৎসায় গাফিলতি

পুলিশ জানিয়েছে, বিমলা বিভিন্ন বাড়িতে রান্না-সহ বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন। স্বামী অরুণ রায় গ্রিলের মিস্ত্রির কাজ করেন। দুই মেয়ের মধ্যে বড় জয়াও পাকুড়তলা লাগোয়া একটি নার্সিংহোমে কাজ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ১৭:০০
Share:

রোগী মারা গিয়েছেন। তার পরে সেই দেহ চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠল এক নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সোমবার সকালে শিলিগুড়ি হামিকপাড়ার বলাইদাস চট্টোপাধ্যায় রোডের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম বিমলা রায় (৪৫)। দক্ষিণ একটিয়াশালে তাঁর বাড়ি। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ইউটেরাসের টিউমার ও অ্যাপেনডিক্সের অস্ত্রোপচারের পর এ দিন সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক দেখার পরেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দেহটি একটি অ্যাম্বুল্যান্সে নিজেরাই তুলে দেন। তার পরে অন্য নার্সিংহোমে আইসিইউতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন। ধীরে ধীরে লোকজন ভিড় করতেই বিষয়টি সামনে আসে। বিক্ষোভ শুরু হতে পুলিশও আসে। প্রায় ৬ ঘন্টা দেহটি নার্সিংহোমের সামনে গাড়িতে রেখে বিক্ষোভ হয়। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। রাত অবধি অবশ্য কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, বিমলা বিভিন্ন বাড়িতে রান্না-সহ বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন। স্বামী অরুণ রায় গ্রিলের মিস্ত্রির কাজ করেন। দুই মেয়ের মধ্যে বড় জয়াও পাকুড়তলা লাগোয়া একটি নার্সিংহোমে কাজ করেন। সেখানে পরিচিতের সুবাদে অসুস্থ মা’কে কিছু দিন ধরে এক চিকিৎসককে দেখাচ্ছিলেন। গত ৩১ মে বিমলাদেবীকে হাকিমপাড়ার ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ নাগ বিমলাদেবীর ইউটেরাস এবং অ্যাপেনডিক্সে দু’টি অস্ত্রোপচার করেন। তারপর থেকে তিনি সুস্থই ছিলেন।

Advertisement

মৃতার ছোট মেয়ে টুম্পা জানান, এ দিন মা’কে ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। সকালে বাবা গিয়ে দেখে, মা-র একটা পা বেড থেকে ঝুলে রয়েছে। টুম্পা বলেন, ‘‘চিকিৎসক এসে তিনি মা মারা গিয়েছেন বলে জানান। এর মধ্যে আমরা টেলিফোনে খবর পাই।’’ মৃতার স্বামী অরুণবাবু জানান, ‘‘মৃত্যুর পরে দু’ঘন্টা দেহ না রেখেই, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের একজন অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে তাঁর দেহ পাশের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে ভর্তির কথা বলেন। মৃত রোগীকে তড়িঘড়ি বাইরে বার করা থেকেই সন্দেহ বাড়ে। মনে হচ্ছে, চিকিৎসায় ভুল হওয়ায় তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল।’’ অভিযোগ করেননি কেন? তিনি বলেন, ‘‘পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’’

এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য জয়ন্তী রায়ও নার্সিংহোমে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, ‘‘মহিলার অস্ত্রোপচারের আগে রক্তক্ষরণ হত। ঠিকঠাক দু’টি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। উনি খাওয়াদাওয়া করছিলেন। হঠাৎ সকালে শরীর খারাপ হলে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আমি মৃত্যুর শংসাপত্র দিয়েছি। নার্সিংহোম কী করল, তা বলতে পারব না।’’ আর নার্সিংহোমের কর্ণধার অমিত দাসের দাবি, ‘‘একটা ভূল বোঝাবুঝি ছিল। মিটে গিয়েছে।’’

এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, একটি দোতলা বাড়ির নীচতলায় ঘুচপি ঘরগুলিতে নার্সিংহোমটি চলছে। পার্কিং, বসার ঠিকঠাক ব্যবস্থা নেই। ওয়ার্ডের হাল ভাল নয়। ফ্যান চলে না। গ্যারাজে অফিস বানানো হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নার্সিংহোমটি চলছে। প্রশাসনের বিষয়টি দেখা দরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement