প্রতীকী ছবি
তখন সকাল গড়িয়ে দুপুর। কোয়রান্টিন সেন্টার থেকে একে একে ওঁরা সবাই বেরিয়ে এলেন। বাড়ি ফিরবেন। সকলের চোখই যেন আনন্দে ছলছল করছে। দূরে দাঁড়িয়ে প্রশাসনিক আধিকারিক-চিকিৎসকদের চোখও কিঞ্চিৎ বিষন্ন। এগিয়ে এলেন কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল। বললেন, “ওঁরা ১২ জন কোভিড পজিটিভ ছিলেন। আজ পুরোপুরি সুস্থ। আমার কাছে আজ সব থেকে সুন্দর দিন।”
কোচবিহারে করোনায় আক্রান্তের হারকে এক ধাক্কায় পিছনে ফেলে দিল সুস্থতার হার। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার থেকে জেলার ৯৪ জন করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। সব মিলিয়ে জেলায় ২৫৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার মধ্যে ২১২ জন সুস্থ হয়েছেন। যা দেখে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে কোচবিহার জেলা প্রশাসনের ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের।
প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রায় টানা দু-মাস গ্রিন জোন ছিল কোচবিহার। পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতে শুরু করতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আক্রান্তের সংখ্যা। যা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্তারা। দফায় দফায় বৈঠকে বসেন জেলাশাসক পবন কাদিয়ান। একাধিক পদক্ষেপ শুরু হয়। তার পরেও বাজারে ভিড়, অসচেতনতার নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এই অবস্থার মধ্যেই কোচবিহারের সিএমওএইচ বদলি হন। নতুন সিএমওএইচ রঞ্জিত ঘোষ দায়িত্ব নেন। তার পরেও আক্রান্তের হার বাড়ছিল। তবে সেইসঙ্গে সুস্থতার হারও বাড়তে শুরু করে।
সিএমওএইচ বলেন, “করোনা আক্রান্তদের সবসময় নজরে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ তাঁরা পুরোপুরি মেনে চলেছেন। মানুষের এই সচেতনতা আমাদের কাজে সহায়ক হয়েছে।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, আক্রান্তদের প্রায় সবাই উপসর্গহীন। প্রথমদিকে তাঁদের শিলিগুড়িতে পাঠানো হলেও পরে তাঁদের বেশিরভাগকেই কোয়রান্টিন সেন্টারে রেখে চিকিৎসা হয়েছে।
কীভাবে চিকিৎসা হয়েছে কোয়রান্টিন সেন্টারে? প্রশাসনের কর্তারা জানান, প্রতিদিন দু-বেলা চিকিৎসক ওই রোগীদের দেখতেন। তারপর কিছু পরামর্শ। এর বাইরে তাঁদের ভাল খাবার দেওয়া হত। সেই তালিকায় মাছ-মাংস-ডিমের সঙ্গে ফল ছিল। পাশাপাশি, তাঁদের সবসময় মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা হত। ওই বিষয়ে চিকিৎসা কর্মীদের সঙ্গে বড় ভূমিকা নিয়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই আক্রান্তদের সঙ্গে নিয়মিত গল্প করতেন তাঁরা। সেখানে গান শোনা, ক্যারম খেলার ব্যবস্থা হয়েছিল। এক আধিকারিক বলেন, “আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি যাতে ওঁরা মানসিক ভাবে সুস্থ থাকেন।”