অনিল সাহার সঙ্গে মন্ত্রীর সাক্ষাতে জল্পনা

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের উপরে ‘হামলার চেষ্টা’র অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় শুক্রবারই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার। ২৪ ঘণ্টার মাথায় শনিবার সকালে সেই গৌতমবাবুকেই দেখা গেল সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম প্রবীণ সদস্য অনিল সাহার বাড়িতে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০২:০৪
Share:

নিজের বাড়িতে অনিল সাহা। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের উপরে ‘হামলার চেষ্টা’র অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় শুক্রবারই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার। ২৪ ঘণ্টার মাথায় শনিবার সকালে সেই গৌতমবাবুকেই দেখা গেল সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম প্রবীণ সদস্য অনিল সাহার বাড়িতে। বেলা ১০টা থেকে মন্ত্রী প্রায় ১ ঘণ্টা কাটালেন সেখানে। উভয় তরফের শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন ওই সাক্ষাৎকারকে ‘সৌজন্যমূলক’ বললেও তা নিয়ে পাড়া-পড়শি তো বটেই, গোটা শিলিগুড়িতেই আলোড়ন পড়েছে। খবর পৌঁছেছে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও।

Advertisement

সিপিএমের অন্দরে অনিলবাবু দলের অন্যতম দুই নেতা অশোকবাবু-জীবেশবাবুর বিরোধী শিবিরের বলেই পরিচিত। সেই অনিলবাবুর সঙ্গে ‘স্বাস্থ্য সংক্রান্ত’ কুশল বিনিময় করতে মন্ত্রী প্রায় এক ঘণ্টা কাটিয়েছেন। তাঁর ‘অনিলদা’র আরোগ্য কামনা করে যে কোনও রকম দরকারে যোগাযোগের অনুরোধ করেছেন মন্ত্রী। পক্ষান্তরে, কাজের গতি ঠিক রাখার জন্য ‘স্নেহভাজন গৌতম’কেও ‘শরীরের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া’র পরামর্শও দিয়েছেন সিপিএমের ওই প্রবীণ নেতা।

‘সৌজন্যমূলক’ বলে দাবির পরেও জল্পনা কেন?

Advertisement

কারণ, সামনেই শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট। সেখানে পরিষদের পাঁচ বারের সভাধিপতি তথা সিপিএম নেতা অনিলবাবুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এখনও অনিলবাবু কোনও গ্রামে গেলে সেখানে ভিড় উপচে পড়ে। ইতিমধ্যেই অনিলবাবুর ছেলে ও পুত্রবধূ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আসন্ন পরিষদের ভোটের মুখে অনিলবাবুর পরামর্শ মিললে যে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে সে কথা একান্তে মানছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই। তবে তৃণমূলের নীচুতলার নেতাদের কয়েকজনের দাবি, বাম আমলে গ্রামে নানা সময়ে ‘অত্যাচারিত’রা যে এখনও সিপিএমকে বিশ্বাস করে না সেটা মাথায় রেখে গৌতমবাবুর পদক্ষেপ করা উচিত। জেলা সিপিএমের একাধিক শীর্ষ নেতা জল্পনার কথা স্বীকার করেন। তাঁরা জানান, একদিকে অশোকবাবু-জীবেশবাবুদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ব্যতিব্যস্ত করা ও অন্যদিকে অনিলবাবুর বাড়িতে গেলে তো জল্পনা হবেই। এমনকী, দুজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রায় ঘণ্টাখানেক কথাবার্তা বললে, তাতে রাজনীতির কোনও প্রসঙ্গ ওঠেনি সেটা দু-দলের অনেকেই মানতে নারাজ।

যদিও গৌতমবাবু রাজনৈতিক কোনও কথাবার্তা হয়নি বলে দাবি করেছেন। মন্ত্রীর দাবি, ‘‘উনি অনেকদিন ধরে অসুস্থ শুনেছি। নানা সময়ে কথাবার্তা হলেও দেখা হয়নি। তাই দেখতে গিয়েছিলাম। ওঁর চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নিলাম। কোনও দরকার হলে যোগাযোগ করার অনুরোধ করলাম। উনিও আমাকে কাজের গতি রাখার জন্য শরীরের দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিলেন।’’ গৌতমবাবু অনিলবাবুর বাড়িতে যান বেলা ১০টা নাগাদ। সেখান থেকে বার হন ১১টা নাগাদ। পরে অনিলবাবু বলেন, ‘‘এর মধ্যে রাজনীতি নেই। আমিও শিলিগুড়ির। গৌতমও এখানকার। আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমার ক্যানসার হয়েছে শুনে ও (গৌতম) স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এসেছিল।’’

গোড়ায় কোমরের ব্যথায় ভূগছিলেন অনিলবাবু। বছরখানেক আগে তাঁর প্রস্টেটে ক্যানসার ধরা পড়ে। সে জন্য রেডিওথেরাপি চলছে তাঁর। চিকিৎসাধীন থাকায় দলের বৈঠকে আগের মতো নিয়মিত যান না অনিলবাবু। উপরন্তু, অশোকবাবু পুরভোটে জিতে মেয়র হওয়ার পরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে ঠাঁই পাওয়ায় অনিলবাবুর অনুগামীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের কয়েকজনের অভিযোগ, অনিলবাবু এখনও যোগ্য মর্যাদা পাচ্ছেন না সিপিএমে। সেই ক্ষুব্ধ অংশকে কাছে টানতেই তৃণমূল যে চেষ্টা করছে তা একান্তে কবুল করছেন সিপিএমের একাধিক জেলা নেতাও। সেই কারণে, মহকুমা পরিষদের ভোটের প্রাক্কালে ফের নানা কর্মসূচিতে অনিলবাবুকে রাখার উপরে জোর দিয়েছে জেলা সিপিএমও। আজ, রবিবার সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকে থাকতে বারবার অনুরোধ গিয়েছে অনিলবাবুর কাছে। সেখান থেকে ফাঁসিদেওয়ার গ্রামেও দলের কর্মিসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন অনিলবাবু।

সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘হিলকার্ট রোডে একটা গোলমাল হয়েছিল। আমাদের পার্টি অফিস আক্রান্ত হয়েছিল। অথচ আমরা নাকি মন্ত্রীর উপরে হামলা করার চেষ্টা করেছিলাম। এমন মামলা দেওয়া হয়েছে। আদালতের উপরে আমাদের আস্থা রয়েছে। জামিন মিলেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মন্ত্রী অনিলদার বাড়িতে গিয়েছিলেন শুনেছি। আমার সঙ্গে অনিলদার কথাও হয়েছে। মন্ত্রী যদি সকলের বাড়িতে গিয়ে এমন স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন তা হলে তো ভালই।’’ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোকবাবুর মন্তব্য, ‘‘এটা নিয়ে কি আর বলব! এটুকু বলতে পারি, সৌজন্যবোধের ধারাবাহিকতা থাকাটা বাঞ্ছনীয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement