এ ভাবেই হাসপাতাল চত্বরে থাকেন রোগীর আত্মীয়েরা। -নিজস্ব চিত্র।
বছরের পর বছর খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হচ্ছে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের রোগীর আত্মীয়দের। মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাফে ওয়েটিং রুম না থাকায় খোলা আকাশের নীচে থাকতে হয় কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের এই বিভাগে ভর্তি থাকা রোগীর পরিবারের লোকেদেরও। বৃষ্টি হলে যেমন ভিজতে হয়, তেমনই কনকনে শীতেও খোলা আকাশের নীচেই ঠাঁই হয় তাঁদের। অথচ তাঁদের জন্য সঠিক আশ্রয়ের কোনও ব্যবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করেননি বলেই অভিযোগ রোগীর পরিজনদের।
সূত্রের খবর, এক বছর আগেও মেডিক্যাল কলেজের বিল্ডিংয়ের মধ্যেই একটি করিডরে আশ্রয় পেতেন তাঁরা। বর্তমানে সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাফের সামনের রাস্তা বাঁশ দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে।
রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাফে প্রসূতিদের ভর্তি করানোর পর অনেকেরই সিজার হয়। এই অবস্থায় মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাফে রোগীর আত্মীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। সেখানে রোগীর সঙ্গে থাকার কোনও অনুমতি নেই। কিন্তু সিজারের রোগীর ক্ষেত্রে যে কোনও সময় সমস্যা তৈরি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাইকের মাধ্যমে রোগীর বাড়ির লোককে ডাকেন। তাই রোগীর পরিবারের একজন সদস্যকে হাসপাতালের বাইরেই থাকতে হয়।
প্রতিদিন এই ধরনের বহু প্রসূতি মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাফে ভর্তি হন। নতুন রোগী এবং পুরনো রোগী মিলিয়ে হাসপাতালের বাইরে প্রতিদিন প্রায় ১০০ জনেরও বেশি রোগীর আত্মীয় রাস্তায় বসে কাটিয়ে দেন। মেডিক্যাল কলেজে একটি প্রতীক্ষালয় রয়েছে কিন্তু সেটি মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাফ থেকে অনেকটা দূরে। সেখানে আশ্রয় নিলে এই বিভাগের রোগীর আত্মীয়দের মাইকে ডাকলে তা শুনতে পাওয়া যায় না। যার জন্য রাস্তাতেই থাকতে হয় তাঁদের। মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাফে রোগী নিয়ে এসে এমন ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন মিনতি রায়। তিনি বলেন, “যেহেতু হাসপাতালে রোগী রয়েছে, তাই কষ্ট হলেও এ ভাবেই থাকতে হচ্ছে। রাতের ঠান্ডায় শরীর জমে যায়। মশার কামড়ে ঘুম আসার প্রশ্নই আসে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি রোগীর পরিবারের লোকেদের জন্য মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাফের পাশে একটি ওয়েটিং রুম তৈরি করে দেন তবে সকলের সুবিধা হয়।“ আরেক রোগীর পরিবারের সদস্য শুভজিৎ বর্মন বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজে যে ওয়েটিং রুম রয়েছে সেখানে একটি মাইকের ব্যবস্থা করে দিলেই সকলে সেই ছাদের নীচে গিয়ে বসতে পারেন। তাহলে আলাদা করে আর ওয়েটিং রুম তৈরি করার প্রয়োজনও পড়ে না।"
এ বিষয়ে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের এমএস ভিপি রাজীব প্রসাদ বলেন, “যে সমস্ত রোগীর ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতি থাকে তাঁদের পরিবারের লোকেদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের এখানে ১৫ থেকে ২০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। যাঁদের প্রয়োজন হয় তাঁদের আমরা কার্ড ইস্যু করি। সমস্ত রোগীর আত্মীয়দের জন্য ওয়েটিং রুমের ব্যাবস্থা করা সম্ভব নয়।“