প্রতীকী ছবি।
ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি থাকাকালীন সমিতির বৈঠকে এক শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। কিছুদিন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে থাকা আরাবুল মাধ্যমিকও পাশ করেননি বলে জানাজানি হয়। এ বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় আরাবুলদের বসার দিন ফুরোতে চলল! কলেজ দূরের কথা, স্কুলের মাথাতেও স্নাতক নন এমন কাউকে বসানো হবে না। এমনই ইঙ্গিত শিক্ষা দফতরের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে।
জলপাইগুড়ির বেশ কয়েকটি স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে অথবা সমিতির সদস্য হিসেবে এমন একাধিক নেতা ছিলেন যাঁরা স্নাতক নন। সূত্রের খবর, তাঁদের সরিয়ে নতুন কমিটির তালিকা প্রকাশিত হতে চলেছে। জেলা তৃণমূলের থেকে বাছাই করা নামের তালিকা শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে খবর। যাঁদের নাম পাঠানো হয়েছে, তাঁদের স্নাতক পাশ করার শংসাপত্র চেয়ে নিয়েছে শিক্ষা দফতর। সেই শংসাপত্র যাচাই করার সংস্থানও থাকছে। জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের শিক্ষক নেতাদের একাংশ এই পদক্ষেপকে ‘শিক্ষায় শুদ্ধিকরণ’ বলে দাবি করেছেন।
স্নাতক নন এমন কেউ স্কুলের মাথায় থাকতে পারবেন না এমন সংস্থান ১৯৭২ সালের স্কুল শিক্ষা আইনে ছিল বলে দাবি। যদিও তা মানা হত না বলে অভিযোগ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করে পরিচালন সমিতির মাথায় স্নাতক নন এমন পদাধিকারীকে বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই প্রবণতা আটকাতে এ বার থেকে পরিচালন সমিতির সভাপতি বা সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধানকে। যে স্কুলের পরিচালন সমিতি গঠন হবে সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকা কমিটির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করে জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে হলফনামা দেবেন।
সম্প্রতি জলপাইগুড়ির কলেজগুলির পরিচালন সমিতির পুনর্গঠন হয়েছে। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, দু’একদিনের মধ্যেই একাধিক স্কুলের পরিচালন সমিতির তালিকা প্রকাশিত হবে। এই তালিকায় সুনীতিবালা সদর গার্লস, সোনাউল্লা, সেন্ট্রাল গার্লস, হাইস্কুল, আনন্দমডেলের মতো স্কুলের নাম রয়েছে বলে খবর। জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, ‘যোগ্য’ ব্যক্তিদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এর আগে কয়েকটি স্কুলের সভাপতি পদে তৃণমূলের এমন কিছু নেতা ছিলেন যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক নয়। তাঁদের সকলকে সরিয়ে দেওয়া হতে চলেছে বলে দাবি। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মন্তব্য, “এ সব সরকারি বিষয়। দলের সভাপতি হিসেবে আমার কিছু জানার কথা নয়। তবে শিক্ষা জগতে যোগ্য লোকেদেরই সরকার নিয়োগ করবে।”
শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, যাঁরা বর্তমানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত নতুন নিয়মে তাঁরাও স্কুলের পরিচালন সমিতিতে থাকতে পারবেন না। স্নাতক নন তবু স্কুলের মাথায় বসে আছেন এমন কিছু ঘটনার উল্লেখ করে বছরখানেক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন জলপাইগুড়ির তৃণমূলের শিক্ষক নেতা বিবেকানন্দ অধিকারী। তিনি বলেন, “সমিতির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাইয়ের নিয়মের সুবাদে যদি জেলার শিক্ষাজগতে যোগ্য মুখেরা আসেন, তবে শিক্ষার উন্নতি হবে।”