তুফানগঞ্জ মানসিক হাসপাতাল

মন, মন, তোমার ডাক্তার নাই উত্তরবঙ্গ?

বহির্বিভাগের ঘরের সামনে বসানো রয়েছে বড়সড় হোর্ডিং। যাতে লেখা, মানসিক রোগের (উন্নত) চিকিৎসা আছে। ঘরের ভিতর রোগীদের অবশ্য সামলাচ্ছেন একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী। পুরানো রোগীদের সঙ্গে আসা আত্মীয়দের দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে কাউকে নিয়মিত ওষুধ চালু রাখার কথা বলছেন।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০২:৪৬
Share:

ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের নাম লেখা বোর্ডটিও। নজর নেই কারও। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

বহির্বিভাগের ঘরের সামনে বসানো রয়েছে বড়সড় হোর্ডিং। যাতে লেখা, মানসিক রোগের (উন্নত) চিকিৎসা আছে। ঘরের ভিতর রোগীদের অবশ্য সামলাচ্ছেন একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী। পুরানো রোগীদের সঙ্গে আসা আত্মীয়দের দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে কাউকে নিয়মিত ওষুধ চালু রাখার কথা বলছেন।

Advertisement

অনেকে আবার পাশের ঘরে ফার্মাসিস্টের কাছে যাচ্ছেন। নতুন রোগীদের জন্য অবশ্য একটাই দাওয়াই— কোচবিহার বা আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে যেতে হবে। ওখানকার বহির্বিভাগে দেখিয়ে রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

অথচ, মানসিক চিকিৎসার জন্য এটাই উত্তরবঙ্গের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে একমাত্র চিকিৎসক চাকরি থেকে ইস্তাফা দেওয়ার পর প্রায় সাত মাস কেটে গিয়েছে। ছবি বদলায়নি। শুধুই আশ্বাস মিলেছে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “ওই হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসক সমস্যা মেটানোর ব্যাপারেও চেষ্টা হচ্ছে।”

কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “কিছু দিন আগেও শিলিগুড়িতে আয়োজিত বৈঠকে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁরা আশ্বাসও দিয়েছেন। এ মাসে চিকিৎসক আসতে পারেন।”

কিন্তু এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, অনেকেই জানেন না, হাসপাতালের এই হাল। তাই নানা জায়গা থেকে রোগী নিয়ে পরিজনেরা আসেন। দৈনিক গড়ে ৫০ জন রোগী আসেন। তাঁরা প্রচণ্ড অসুবিধায় পড়েন। এই হাসপাতালে কোচবিহারের নানা এলাকা তো বটেই, লাগোয়া আলিপুরদুয়ার ও অসম থেকেও অনেকে আসেন।

মাসখানেক আগে স্বাস্থ্য অধিকর্তা কোচবিহার সফরে এসেছিলেন। তুফানগঞ্জে মানসিক হাসপাতালের পরিকাঠামো তিনি ঘুরে দেখেন। তখন চিকিৎসক নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারপরেও কাজ হয়নি। অথচ প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ করে নতুন ভবন তৈরির কাজ চলছে। ১৫০ শয্যার অন্তর্বিভাগ চালু করার কথাও বলা হচ্ছে। অথচ এতদিনেও বহির্বিভাগের জন্য চিকিৎসক মেলেনি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম জমানায় তুফানগঞ্জে উত্তরবঙ্গের একমাত্র মানসিক হাসপাতালটি তৈরি হয়। শুরু থেকে শুধু বহির্বিভাগে রোগী দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। রবিবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগী দেখাতে ভাল ভিড় হত।

এক সময় ওই হাসপাতালে তিন জন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বসতেন। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা কমেছে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে একমাত্র চিকিৎসক আচমকা চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় সমস্যা জটিল হয়। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, জেলা সদর কোচবিহার হাসপাতালে জেলার একমাত্র মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। ফলে তুফানগঞ্জ হাসপাতালে কাউকে পাঠানো যাচ্ছে না।

খাগরাবাড়ির জোৎস্নাবিবি বলেন, “মাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলাম। হাসপাতালে একজনও ডাক্তার নেই জেনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। শুনেছি কোচবিহারেও দৈনিক ওই বহির্বিভাগ খোলা থাকে না। রোগী নিয়ে এতদূর এসে এমন ভোগান্তি হবে ভাবতে পারছি না।” ঘোকসাডাঙার মহম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, “হাসপাতাল আছে, চিকিৎসক নেই। কবে আসবেন তা-ও কেউ জানাতে পারছেন না।” বাণেশ্বরের নারায়ণ মণ্ডল বলেন, “ছেলেকে দেখাতে এসেছিলাম। অন্য কয়েকবারের মতো এদিনও চিকিৎসক না থাকার কথা শুনে বাড়ি ফিরতে হল। এমন আর ক’দিন চলবে?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement