প্রতীকী ছবি।
গত ৮ জানুয়ারি বাগডোগরার বিহার মোড় থেকে ৪ লক্ষেরও বেশি টাকার জাল নোট ধরে কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা ডিআরআই। গ্রেফতার করা হয় গোলাম মর্তুজা নামে মালদহ যদুপুরের এক বাসিন্দাকে। জানুয়ারিতেই কলকাতা পুলিশের এসটিএফ সাড়ে ৮ লক্ষ টাকার জাল নোট-সহ মালদহের তিন জনকে গ্রেফতার করে। এর পরে ১৭ অগস্ট বিহারের কিসানগঞ্জের মহম্মদ আফতাব ও মহম্মদ বৈতুল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। এ বার মর্তুজার সঙ্গী হিসেবে কাজ করত। গত কয়েক মাসে বিহারের পূর্নিয়া এবং চম্পারনেও একাধিক ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। তদন্তে নেমে তাঁরা জানতে পেরেছেন, মর্তুজা গোটা দেশের জাল নোট চক্রের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মনে করা হচ্ছে, উত্তরবঙ্গকে করিডর করে বাংলাদেশ থেকে বিহারে বা নেপাল থেকে বিহার হয়ে ভারতে ঢুকছে জাল নোট। উত্তর-পূর্বেও জাল বিছিয়েছে এই চক্র। সে জন্যও উত্তরবঙ্গকে করিডর করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, উত্তর-পূর্বের প্রবেশদ্বার হিসেবে শিলিগুড়িকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ-মালদহ-শিলিগুড়ি-নেপাল এই করিডরটিকে সক্রিয় করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। গত এক বছর ধরে এই চক্রের সদস্যরা ওই সীমান্ত জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, খবর পেয়েছে এনআইএ। এর পরেই তারা মালদহ, শিলিগুড়ি, নেপাল সীমান্ত এবং বিহারের দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে শুরু করেছে।
এনআইএ সূত্রের খবর, জানুয়ারিতে মুর্তজার কাছ থেকে যে ৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়, তার মধ্যে ৯৮টি দু’হাজার টাকার নোট ছিল। সেগুলির ধরন, গুণমান সম্পর্কে নাসিকের টাঁকশালের ল্যাব থেকে বলা হয়েছে, জাল নোটগুলি অত্যন্ত উচ্চমানের। ১৭টি পয়েন্টের মধ্যে বেশিরভাগই ওই জাল নোটে ঠিকঠিক ছিল। আসল টাকার মধ্যে লাইনের মতো একটি থ্রেড থাকে। একটি টাকা ছাপার কাগজের মধ্যেই তৈরি করা থাকে। জাল নোটের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই তা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এ বার দেখা যাচ্ছে, এই জায়গাতেও আসলের মতো কাগজ ব্যবহার শুরু হয়েছে। তাতে মন্ত্রকের তরফে এনআইএ-কে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। লকডাউনের আগে ১২ মার্চ থেকে শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির অফিসারেরা।
তদন্তরকারীরা জানাচ্ছেন, মালদহ, মুর্শিদাবাদকে কেন্দ্র করে মহব্বতপুর, গোলাপগঞ্জ, হবিনগর, মিলিক সুলতানপুর, ঘোষটোলা, বৈষ্ণবনগর, ধূলিয়ান, নিমতিতা, শমসেরগঞ্জের মতো রুটকে সক্রিয় করে কাজ চলছে। তেমনিই সক্রিয় নেপাল সীমান্ত এবং বিহারের একাংশ। কিসানগঞ্জ, পূর্ণিয়া এবং চম্পারনে সক্রিয় থাকা চক্রের সদস্যরা জাল নোট উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং কলকাতার দিকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, ‘‘মালদহকে কেন্দ্র করে নতুন বেশ কয়েকটি রুট তৈরি হওয়ায় খবর মিলেছে। নতুন করিডরকে সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। আরও কিছু ঘাঁটির খোঁজে নজরদারি শুরু হয়েছে।’’