প্রতীকী চিত্র
ভারত বাংলাদেশের মালদহ, মুর্শিদাবাদ লাগোয়া সীমান্ত এবং বিহার সীমানায় কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির নজর বাড়তেই জালনোটের কারবারিরা উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির দিকে সরে আসার চেষ্টা করছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা শুরু হল। বিশেষ করে গত পাঁচ মাসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র অফিসারেরা মালদহকে কেন্দ্র করে একের পর এক ধরপাকড়ে নামায় ওই সন্দেহ আরও বেড়েছে। মার্চের পর গত শনিবার শিলিগুড়িতে পাচারচক্রের এক বড় চাঁইকে ধরার পর জালনোট পাচারের নতুন রুট নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।
কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত মার্চ মাসে বাগডোগরা থেকে অনেক দিন পর বড় অঙ্কের জালনোট-সহ গ্রেফতার হয় মালদহের যদুপুরের গোলাম মর্তুজা। এবার গত শনিবার বিহারের কুখ্যাত অপরাধী তথা জালনোটের চাইঁ শাহনওয়াজ আনসারি ধরা পড়ে শিলিগুড়ির পাশেই ফুলবাড়িতে। সামান্য হলেও উদ্ধার হয় জালনোট। শিলিগুড়ির কাছে বাংলাদেশ ছাড়াও কাঁটাতারহীন নেপাল সীমান্ত রয়েছে। আগেও বহু মামলায় এনআইএ-র অফিসারেরা জেনেছেন, বাংলাদেশের মতো নেপাল থেকেও জালনোট এপারে ঢুকছে। তেমনিই, শিলিগুড়ির একেবারে পাশের ফুলবাড়িতে চাউলহাটি-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। পাশেই ফাঁসিদেওয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত এখনও পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়। তাই জালনোটের চক্র নতুন কোনও রুট তৈরির কাজে নেমেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।
শাহনওয়াজ আনসারিকে এখনও নিজেদের হেফাজতে না নিলেও গত দু’দিনে এনজেপি থানায় গিয়ে ধৃতকে এক দফায় জেরা করে এসেছেন এনআইএ-র অফিসারেরা। শিলিগুড়ি কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতরের হেফাজতের মেয়াদ শেষ হলেও ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে এনআইএ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তা জানান, এতদিন সব তদন্তকারীরাই জানতেন, মালদহকে কেন্দ্র করে জালনোটের কারবার চলে। বিহার, মুর্শিদাবাদেরও একটি অংশ রয়েছে। তবে রুট বদলের যে চেষ্টা হচ্ছে, তা অনুমান করা হচ্ছিল। এবার সেটাই আমাদের মনে হচ্ছে। শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িকে কেন্দ্র করে জালনোটার চাঁইরা কিছু নেটওয়ার্ক তৈর করে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে। তাই ফাটাপুকুর এলাকার এক যুবক শাহনওয়াজ আনসারিদের সঙ্গে ধরা পড়েছে।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, জালনোটের চাঁইদের সঙ্গে বাংলাদেশ, নেপালের সঙ্গে দুবাইয়ের কিছু যোগসূত্র মিলছে। টেলিফোনে কিছু তথ্যের ভিত্তিতে সেগুলি যাচাই হচ্ছে। নেপালে দুবাইয়ের যোগসূত্র আগেই সামনে এসেছিল। আইএসআই মডিউলদের মাধ্যমে নেপালে ভারতীয় জালটাকা ঢোকানো হয়। বরাবর দুবাই
বা পাকিস্তান থেকে বসে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মালদহে বা বিহারে এনআইএ-র চাপ বাড়তেই
শিলিগুড়ি বা উত্তরবঙ্গ লাগোয়া বিহারের নেপালকে আবার সক্রিয় করা হচ্ছিল বলে মনেই হচ্ছে। শুধু জালনোটই নয়, এখান দিয়ে অপহরণ,টাকা লুটের মতো অপরাধও করার প্রস্তুতি চলছিল কিনা, সেই তদন্তও শুরু হয়েছে।