সীমান্ত পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র সচিব। —নিজস্ব চিত্র।
বিনিময় পর্ব শুরু হলে বাংলাদেশের ছিটমহলের বাসিন্দাদের সীমান্ত পেরোনোর পরে অনেকটা পথ হেঁটে আসতে হবে শুনে বিস্মিত রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার হলদিবাড়িতে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। এই সময়ই তিনি জানতে পারেন, সীমান্ত পেরোনোর পরে ছিটমহলের বাসিন্দাদের হেঁটে আসতে হবে অনেকটা পথ। তখনই স্বরাষ্ট্র সচিব কোচবিহার জেলা প্রশাসনকে রাস্তা তৈরির নির্দেশ দেন।
এদিন হলদিবাড়ি কৃষি খামার সংলগ্ন জমি পরিদর্শন করেন তিনি। এখানেই ছিটমহলের বাসিন্দাদের রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। এর পর বেলতলিতে গিয়ে প্রস্তাবিত তিস্তা নদীর ওপর সেতু তৈরির জায়গা পরিদর্শন করেন। সবশেষে ডাঙাপাড়ায় ভারত বাংলাদেশের সীমান্তের ৩ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় যান। সব মিলিয়ে ঘণ্টা দেড়েক সময় তিনি হলদিবাড়িতে ছিলেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনটি জায়গায় দাঁড়িয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। রাজ্যের স্বরাস্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলাদেশের ছিটমহলগুলি থেকে যারা আসবেন তারা ডাঙাপাড়ার এই সীমান্ত দিয়ে কিভাবে আসবেন এবং তাদের থাকার জায়গা কোথায় হয়েছে তা দেখতে আমি এখানে এসেছি। তিস্তার ওপর সেতুটি কোথায় নির্মিত হবে সেই জায়গাটিও দেখলাম। এই সেতু তৈরির জন্য বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির ব্যবস্থা হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায় যে হলদিবাড়ি এবং জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণ বেরুবাড়ি সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের মধ্যে ৪০টি ভারতীয় ছিটমহল আছে। সেখানে মোট ৩ হাজার ৮৭৯টি পরিবার বাস করছেন। মোট বাসিন্দার সংখ্যা ১৯ হাজার। ছিটমহলগুলি সবগুলিই কোচবিহার জেলার অন্তর্গত। সবগুলিই বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থিত। কোনটিই সীমান্তে কাছাকাছি নয়। বাংলাদেশ থেকে তাঁরা ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের এপারে কি করে আসবেন সেটাই সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
হলদিবাড়ির ডাঙাপাড়ায় ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার গায়ে তিন নম্বর গেট। সেখান থেকে দেড়শ মিটার ভারতীয় ভূখন্ড ছেড়ে বাংলাদেশের সীমানা। ঠিক হয়েছে এই তিন নম্বর গেট দিয়েই ভারতে আসবেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। বুধবার বিএএফের পক্ষ থেকে এই গেট খুলে দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র সচিব গেটের ওপারে যান। তার প্রশ্ন ছিল ছিট মহলের বাসিন্দারা আসবেন কি করে। কারণ দেড়শ মিটার ভারতীয় ভুখন্ডের ওপারে বাংলাদেশের রাস্তা আছে। এপারে কিছু নেই। স্বরাস্ট্র সচিব কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথনের কাছে জানতে চান ওপার থেকে তারা আসবেন কি করে?
তখন তাঁকে জানান হয় যে দেড়শো মিটার দূরে বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে হেঁটে এপারে আসবেন। এরপরেই স্বরাষ্ট্র সচিব কোচবিহারের জেলাশাসককে নির্দেশ দেন, সেখানে গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত রাস্তা তৈরি করতে। যাতে ছিটমহলের বাসিন্দারা সরাসরি সীমান্তের গেট পর্য্যন্ত আসতে পারেন। ডাঙাপাড়ায় এই তিন নম্বর গেট থেকে ৫০০ মিটার দূরে রেলপথ আছে। এখন সেই রেলপথটি পরিত্যক্ত। রেললাইনও নেই। একসময়ে তৈরি করা উঁচু রেলপথটিতে জঙ্গল হয়ে আছে। তিনি এই রেলপথটিকেও আপাতত রাস্তায় পরিণত করে ব্যবহার করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেন। প্রয়োজন হলে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন। এছাড়াও গেট পার হয়ে এপারে আসার পর তাদের বিশ্রামের জন্য এবং সমীক্ষা চালানোর জন্য ডাঙাপাড়ায় একটি ক্যাম্প তৈরির নির্দেশ দেন।
সমীক্ষা শেষ হলে ছিটমহলের বাসিন্দাদের হলদিবাড়ি কৃষিখামারের মাঠে অস্থায়ী আবাসে নিয়ে যাওয়া হবে। জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি খামারে মোট ২২.৬৬ একর ফাঁকা জায়গা আছে। এখানে তাদের থাকার জন্য অস্থায়ী বাড়ি তৈরি হবে। প্রতিটি বাড়ির জন্য ২০০ স্কোয়ার ফুট এলাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি তৈরির জন্য ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। ২৫০ জন বাসিন্দার জন্য একটি করে পানীয় জলের কল এবং প্রতি ২০ জন বাসিন্দার জন্য একটি করে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হবে।