পাহাড়ি রাস্তা। প্রতীকী চিত্র।
আগামী বছরেই সিকিমের সঙ্গে বাংলা নতুন জাতীয় সড়ক দিয়ে জুড়তে চলছে। তাতে সিকিমের ‘লাইফ লাইন’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে শুধু আর ভরসা করতে হবে না যাত্রী ও চালকদের। ডুয়ার্সের বাগরাকোট থেকে কালিম্পঙের রেশিখোলা হয়ে সিকিমের রানিপুল অবধি যাওয়ার নতুন ৭১৭-এ নম্বর জাতীয় সড়কটির ৭০ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ। সম্প্রতি এ রাজ্যের প্রশাসনের তরফে রাস্তাটির কাজের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। তেমনই, ডুয়ার্সের ডামডিম থেকে আলগাড়া পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার রাস্তাটি চওড়া করে চালু হয়েছে। গত অক্টোবরে রাস্তাটির উদ্বোধন করেছিলেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেটির কাজও দেখা হয়েছে। কিন্তু দু’টি চার লেনের রাস্তার কাজের জন্য বহু গাছ কাটা হয়েছে বলে পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ।
প্রশাসনিক কর্তারা জানান, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে নতুন জাতীয় সড়কটি তৈরি হয়েছে। আর এটি প্রতিরক্ষার কথা মাথায় রেখেই চওড়া করা হয়েছে। প্রথমটির জন্য কেন্দ্র প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আর আলগাড়া থেকে ডামডিমের রাস্তা সংস্কার ও চওড়ার জন্য ৩৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সেবক করোনেশন থেকে সিকিম, কালিম্পং যাওয়ার একটি জাতীয় সড়ক থাকায় তা নিরাপত্তার দিক থেকেও চিন্তার ছিল। বিশেষ করে, ডোকালামের ঘটনার পর সিকিমের চিন সীমান্তে সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। সিকিমকে একই ভাবে দেশের রেল মানচিত্রেও জোড়ার কাজ চলছে। সেবক-রংপো লাইনের কাজও শেষের পথে।
তাই গাছ, পাহাড় না কাটলে রাস্তা, রেললাইন কোনওটিই পাহাড়ে তৈরি করা সম্ভব ছিল না। সেখানে প্রতিটি প্রকল্পে গাছের জন্য ১: ৫ অনুপাত রাখা হয়েছে। একটি গাছ কাটলে, কাজের পরে পাঁচটি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কালিম্পংয়ের জেলাশাসক আর বিমলা বলেন, ‘‘নতুন জাতীয় সড়কটির কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরে তা খুলে যাওয়া নিয়ে কথাবার্তা চলছে।’’ তিনি জানান, রাস্তার জন্য সব জায়গায় গাছ কাটতে হয়েছে। তবে কাজের শেষ লগ্নে শুধু রাস্তাগুলির দুই পাশে নয়, সার্ভিস রোড, বাই রোডেও কিলোমিটার ধরে দু’পাশে গাছ লাগানো হবে। সরকারি ভাবে এই সিদ্ধান্ত রয়েছে।
নতুন জাতীয় সড়কটি তৈরি করছে ‘ন্যাশনাল হাইওয়েজ় অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’। আর ডামডিমের রাস্তাটি চওড়া করে তৈরি করেছে বর্ডার রোড অর্গানাইজ়েশন। লাভা, লোলেগাঁওয়ের মতো এলাকায় গরমের ছুটিতে আসা পর্যটকেরা এই রাস্তাটিই ব্যবহার করছেন। রাস্তাটি খুলে গেলেও, তার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। বর্ষার মরসুমে সেখানে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বহু পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের দাবি, উন্নয়ন বা দেশের নিরাপত্তার কথা হলে কাজ প্রয়োজন। তবে পরিবেশের বিষয়টি প্রকল্পে লেখা থাকলেও, তা অনেক সময় ঠিকঠাক হয় না। গাছ লাগিয়ে দেওয়া হলেও, রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন থাকে। পাহাড়ি পথের জাতীয় সড়কে এই বিষয়টি নজরে রাখা দরকার।