স্কুলের সামনে অচেনা কারও ঘোরাফেরা নজরে এলেই তাকে জেরা করছেন এলাকার দোকানদার ও বাসিন্দারা। কেন, কী কারণে উপস্থিতি, তার ব্যাখ্যা গিতে হচ্ছে আগন্তুককে। কোনও গাড়ি থামলেও চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। হুমকি চিঠির জেরে এভাবেই ডুয়ার্সের মিশনারি স্কুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আসরে নেমেছেন এলাকার মানুষ। মঙ্গলবার বাসিন্দারা জানিয়েছিলেন, এলাকার গর্ব ওই স্কুলের পাশে থাকবেন তাঁরা। সেই প্রতিশ্রুতি পালনের তত্পরতাই দিনভর নজরে এসেছে এখানে।
স্কুলের সামনে ফুচকা দোকান চালান শঙ্কর শাহ। তাঁর কথায়, “সব সময় সতর্ক রয়েছি। স্কুলের আশেপাশে অচেনা কাউকে দেখলেই তাকে আমরা আটকে জেরা করছি।” একই ভাবে নীরবে স্কুলে পাহারাদারির কাজ করছেন বিক্রম ওঁরাও, জগদীশ ওঁরাওরা। গত শনিবার শেষ হুমকি চিঠি মেলার পরই নড়েচড়ে বসেন স্কুল কর্তৃপক্ষ । এর পরই স্কুলের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য জোট বাঁধেন চা বাগান ঘেরা চাম্পাগুড়ির স্থানীয় বাসিন্দারা। মুখের কথাই যে শেষ নয় তা বোঝাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক চোখ এখন স্কুল চত্বরের বাইরেও নজর রাখছে।
বুধবার দুপুরে এই মিশনারি স্কুলে যান জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার। প্রায় আধঘন্টা স্কুলে ছিলেন তিনি। কথা বলেন সিস্টার এবং মাদারের সঙ্গে। পরে তিনি বলেন, “হুমকি চিঠির ঘটনায় স্কুলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বারবার পুলিশ কর্তারাও তদন্তে আসছেন। সামগ্রিক ভাবে সিস্টারদের মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতেই আমি এসেছিলাম।” জেলাশাসকের দাবি, মাদার এবং অন্যান্য সিস্টাররা ভয় পাননি এবং পঠনপাঠনও সুন্দর চলছে।
স্কুলের বিপদে পাশাপাশি দাঁড়াল আদিবাসী বিকাশ পরিষদের দুই যুযুথান শিবিরও। দুপক্ষই জানাল, দীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে আদিবাসী ছাত্রীদের নিখরচায় শিক্ষা পরিষেবা দিয়ে চলা এই প্রতিষ্ঠানে হুমকি চিঠি দিয়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা কখনও তাঁরা বরদাস্ত করবেন না। বুধবার আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সহ সভাপতি তেজকুমার টোপ্পো বলেন, “সেন্ট ক্যাপিটানিওর ঘটনায় শুধু স্কুল কর্তৃপক্ষ আর অভিভাবকরা নন, সমস্ত আদিবাসী সমাজই চিন্তিত। প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা করে স্কুলটির সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।”
আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা জন বারলা এদিন বলেন, “সেন্ট ক্যাপিটানিওর ঘটনায় আমরা চমকে গিয়েছি। স্কুলটি সম্পূর্ণই মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত। একমাত্র এই স্কুলটির জন্যে ভূটান লাগোয়া প্রত্যন্ত চা বাগানগুলির আদিবাসী সমাজের মেয়েরা পড়াশুনো করে স্বনির্ভর হতে পারছে। ওই স্কুলে হুমকি চিঠি দেওয়ার মানে সমস্ত আদিবাসী সমাজকে হুমকি দেওয়া। তাই স্কুলের স্বার্থে আমরা প্রশাসনিক তত্পরতা দাবি করছি। কিছুদিন পুলিশ মোতায়েন করলেই হবে না। সার্বিক ভাবে স্কুলটির ওপর যাতে বিশেষ নজর থাকে সেই জন্যে প্রশাসনিক কর্তাদের অনুরোধ করেছি।”