এইমসের দাবিতে মিছিল রায়গঞ্জ শহরে। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে মিছিল করল রায়গঞ্জ এইমস রুপায়ণ নাগরিক মঞ্চ। রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে প্রায় আধঘন্টা সংগঠনের সদস্যরা রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। এরপর মঞ্চের সদস্যরা শিলিগুড়ি মোড় থেকে কসবা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তায় মিছিল করেন। এ দিনের আন্দোলনে শিক্ষক, চিকিত্সক, পড়ুয়া, ব্যবসায়ী সহ ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ও বহু সাধারণ মানুষ সামিল হয়েছিলেন বলে মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে।
মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর কুণ্ডু বলেন, “উত্তরবঙ্গবাসীর উন্নত চিকিত্সা পরিষেবার স্বার্থে কেন্দ্রের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রায়গঞ্জেই এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ ও মহামিছিল করে রাজ্য সরকারকে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হল।” মঞ্চের আহ্বায়ক জয়ন্ত সোম জানিয়েছেন, রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে খুব শীঘ্রই শিলিগুড়িতে একটি কনভেনশন করে উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলনের সূচনা করা হবে। একই দাবিতে পুজোর পর মঞ্চের তরফে কলকাতায় অবস্থান বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
প্রায় আড়াই মাস আগে রাজ্য সরকার এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য কেন্দ্রকে রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীতে জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার পরেই পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনকে নিয়ে এইমস রুপায়ণ নাগরিক মঞ্চ গঠন করে। গত দু’মাস ধরে মঞ্চের সদস্যরা রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে একাধিক সেমিনার, পথসভা, মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে জনমত তৈরি করেন। সম্প্রতি, মঞ্চের নেতৃত্বে হাসপাতাল তৈরির জন্য পানিশালা এলাকার চিহ্নিত জমির চাষিরা স্বেচ্ছায় জমি দিতে চেয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরোধ করেন। মঞ্চের তরফে জমি অধিগ্রহণ করে অবিলম্বে রায়গঞ্জে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয়।
মঞ্চের সভাপতি তথা রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্রের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুশীল গোস্বামী অভিযোগ করে বলেন, “রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র বা রাজ্যের তরফে আমরা কোনও সাড়া পাইনি।” জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী জোর করে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে হাসপাতাল তৈরির বিরোধী। তিনি বলেন, “বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও মঞ্চের কর্তারা চাষিদের দিয়ে লিখিতভাবে জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন না। তাই দলের কেউ এ দিনের আন্দোলনে সামিল হননি।”
২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের ইউপিএ-১ সরকার রায়গঞ্জে ৮২৩ কোটি টাকা খরচে ১০০ একর জমিতে ৯৬০ শয্যার এইমসের ধাঁচের একটি হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করে। হাসপাতাল তৈরির জন্য কেন্দ্র রাজ্যকে জমি দেওয়ার অনুরোধ করে। সেইমতো রাজ্য সরকারের নির্দেশে এরপর জেলা প্রশাসন পানিশালায় ১১০ একর জমি চিহ্নিত করে। কিন্তু এরপর ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে যায় বলে অভিযোগ।
মঞ্চের আহ্বায়ক দাবি করেছেন, চাষিরা জমির বিবরণ ও নকশা সহ নথি তৈরির কাজ শুরু করেছেন। খুব শীঘ্রই তাঁদেরকে দিয়ে লিখিতভাবে জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার আবেদন জানানো হবে।