মূর্তির রিসর্টের জোড়া মৃত্যুর রহস্যের ৪৮ ঘণ্টা কাটলেও ওই কাণ্ডের কিনারা হল না। শুক্রবার মূর্তিতে যান জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দুই সদস্যের ফরেন্সিক দল। রিসর্টটির ঘর তাঁরা খতিয়ে পরীক্ষা করেন। ঘরের বাথরুম, মেঝে, চাদর, টেবিল সবই পরীক্ষা করে দেখেন তাঁরা। হাতের শিরা যে ব্লেডগুলো দিয়ে কাটা হয়েছে, তা বাইরে থেকে কিনে ব্যাগে নিয়ে এসেছিলেন ব্যাঙ্ককর্মী ওমপ্রকাশ হরিজন। পাঁচটি ব্লেড ছিল। তার তিনটি রক্তাক্ত অবস্থায় মিলেছে। বাকি দু’টি অব্যবহৃতই ছিল।
তবে ওমপ্রকাশ যে প্রথমে আরতি কামির দুই হাতের শিরা ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়ে তারপর আত্মঘাতী হন, সে বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিতই পুলিশ। তাঁরা রাতে খাবারের জন্যও রিসর্টে বলে রেখেছিলেন।
জলপাইগুড়ি জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে নিজে ঘটনার তদন্তের বিষয়টি তদারকি করছেন। তিনি বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা এখনও পাইনি। ফরেন্সিক ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে আমরা দুটো মিলিয়ে পদক্ষেপ করব।’’
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, আরতিদেবীর সঙ্গে ওমপ্রকাশবাবুর দীর্ঘ দিন ধরে সম্পর্ক ছিল। ওমপ্রকাশবাবুর মৃত্যুর পরে হিসেব মেলাতে গিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার গরমিল চোখে পড়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। গত বুধবার হ্যামিল্টনগঞ্জে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার ক্যাশিয়ার ইনচার্জ ওমপ্রকাশবাবু কাজ অর্ধেক করে বেড়িয়ে যান। রাতে মূর্তিতে একটি রির্সটে তাঁর ও আরতিদেবীর দেহ উদ্ধার হয়।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, হ্যামিল্টনগঞ্জ থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করেন ওমপ্রকাশবাবু। তারপর নিমতি পেট্রোল পাম্পে গাড়িতে এক হাজার টাকার তেল ভরেন। সেখান থেকে যান দমনপুর এলাকায়। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন আরতি। তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যান মূর্তিতে। সেখানে গিয়ে ভাড়া গাড়িটি ছেড়ে দেন। আরতির মা জানান, তাঁর বেতনের টাকা তুলতে ও জমা দিতে হ্যামিল্টনগঞ্জের ওই ব্যাঙ্কে যেত মেয়ে। বুধবার দুপুর তিনটে নাগাদ বাড়ি থেকে বের হন আরতি। বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন, কাজের খোঁজে যাচ্ছেন, দিন সাতেক লাগতে পারে। কাজ পছন্দ হলে মেয়েকে নিয়ে যাবেন সেখানে। কাজ পছন্দ না হলে পরের দিন ফিরে আসবেন। কিন্তু আর ফেরেনি। ছোট নাতনিকে নিয়ে কী ভাবে তিনি থাকবেন, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না বৃদ্ধা।