তদন্তে: ঘটনাস্থলে পুলিশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
কলেজের ডায়েরির একটি পাতায় বেশ বেশ বড় বড় করে লেখা দুটো লাইন— ‘আমি আমার জীবনকে খুব ভালবাসি। কারণ, জীবনটা আমার বাবা-মায়ের দেওয়া।’
যে মেয়েটি জীবনকে এতটা ভালবাসতেন, তিনি চলে গিয়েছেন। ওই তরুণীর আত্মীয়, পরিজনদের কথায়, ‘‘বরাবরই চাপা স্বভাবের ছিল মেয়েটি। একা থাকতেই বেশি ভালবাসত।’’ বন্ধু কয়েক জন ছিল। যেমন, এক খুড়তুতো বোন। বয়সে অনেকটা ছোট হলেও দু’জনে বেশ বন্ধু ছিল। সেই বোনের কথায়, ‘‘দিদি যেখানে যেত, আমাকে সঙ্গে নিত। বুধবার আমি এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম।’’ একটু থেমে সে বলল, ‘‘আমি ওর সঙ্গে থাকলে, এমন ঘটনা ঘটত না।’’
প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন ওই তরুণী। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, ‘‘কলেজে পড়ত। তাই বন্ধু-বান্ধবী ছিল। তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে, ঘুরতেও যেত ও।’’ পড়শিদের কারও কারও সন্দেহ, তেমনই কারও ফোন পেয়েই বুধবার সন্ধেয় বার হয়ে যায়নি তো মেয়েটি? কেউ কেউ আবার বলছেন, ‘‘যে ছেলেটির সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ছিল, সে-ও ফোন করে ডেকে নিতে পারে।’’ এ দিন সন্ধেয় এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের কথায়, জেরায় সেই যুবক জানিয়েছে, তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মেয়েটির।
তরুণীর বাবা পেশায় রাঁধুনি। বুধবার মালবাজারে এক বিয়েবাড়িতে রান্নার কাজে গিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে মেয়ের মৃত্যুর খবরে বাড়ি ফিরে এলেও মেয়ের দেহ দেখতে পারেননি। তার আগেই পুলিশ দেহটি নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে দেয়। সারাটা দিন এক রাশ অস্বস্তি নিয়ে বাড়ির এ মাথা ও মাথা পায়চারি করতে করতে বারবার আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘শেষবারের মতো মেয়েটার মুখটাও দেখতে পারলাম না!’’
মায়ের অবস্থা আরও খারাপ। পাগলের মতো উঠোনে গড়াগড়ি খাচ্ছেন তিনি। কখনও আবার তিনি মেয়ের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ছুটে বার হয়ে যেতে চাইছেন বাড়ি থেকে। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে দিতেই তরুণীর কাকিমা বলেন, ‘‘আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু মেয়ে আমাদের খুব আদরের। আমাদের মেয়েকে এ ভাবে কেউ মেরে ফেলল, তা ভাবতেও পারছি না!’’
পরিবারের দাবি, একটি ফোন আসার সঙ্গে সঙ্গে তরুণী বার হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়েও মেয়েটির মোবাইল পায়নি। তবে ময়নাগুড়ি থানার আইসি তমাল দাস জানান, মোবাইল পাওয়া না গেলেও মেয়েটির সিম কার্ডের নম্বর জেনে সেখান থেকে কল রেকর্ড বের করা হয়েছে। ওই নথি ধরে পুলিশ এগোতে চাইছে।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েই কেউ ওই তরুণীকে খুন করে থাকতে পারে। তবে কারও একার পক্ষে এই কাজ সম্ভব নয় বলেও মনে করছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে যেখানে তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়, সেই এলাকাটি শিলিগুড়ি-চ্যাংরাবান্ধা রেললাইনের একেবারে ধারেই। রেল লাইনের উল্টো দিকে একটি ধান খেতের পাশে বাঁশঝাড়ের কাছে পড়েছিল তরুণীর দেহ। পাশেই পড়েছিল একটি কলম। সেটি কি তাঁর? খোঁজ করছে পুলিশ।