ভরদুপুরে লিচুবাগানে গুলি করে খুন

ফের ভরদুপুরে খুনের ঘটনা ঘটল মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে একটি লিচুবাগানে গুলি করে খুন করা হয় সাদিকুল শেখ (২৮) নামে এক যুবককে। সাদিকুল তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও একটি খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল। সাদিকুল খুনে দুষ্কৃতীদের ধরার দাবিতে কালিয়াচকে প্রায় এক ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধও করে তৃণমূল। তবে কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

কালিয়াচক শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০২:৫৩
Share:

নিহতের দেহ রেখে জাতীয় সড়ক অবরোধ কালিয়াচকে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

ফের ভরদুপুরে খুনের ঘটনা ঘটল মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে একটি লিচুবাগানে গুলি করে খুন করা হয় সাদিকুল শেখ (২৮) নামে এক যুবককে। সাদিকুল তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও একটি খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল। সাদিকুল খুনে দুষ্কৃতীদের ধরার দাবিতে কালিয়াচকে প্রায় এক ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধও করে তৃণমূল। তবে কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

সাদিকুলের বাড়ি মালদহ জেলার গাজলের দেওতলা এলাকায়। তিনি বছর তিনেক ধরে কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। তৃণমূলের স্থানীয় যদুপুর অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখের দাবি, ‘‘কংগ্রেসের নেতা জাকির শেখের লোকজনই খুন করেছে আমাদের কর্মী সাদিকুলকে।’’ কালিয়াচকের বিধায়ক ও জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সাবিনা ইয়াসমিন অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি খুন হয়েছেন তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে।’’ সাবিনার কথায়, ‘‘জাকির শেখ তৃণমূলেরই নেতা। তিনি অতীতে কংগ্রেসে ছিলেন। এখন কংগ্রেসের কেউ নন।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের পাল্টা দাবি, ‘‘আমাদের কর্মীকে গুলি করে খুন করেছে কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা। তারা এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে। আর জাকির আমাদের দলের কেউ না।’’ বৈষ্ণবনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের বিশ্বনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘জাকির শেখ তৃণমূলেই রয়েছেন। নওদা যদুপুর এলাকায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। তার একটির মাথায় রয়েছেন বকুল শেখ। অন্যটির মাথায় জাকির। অনেক দিন ধরেই এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি চলছে। সেই কোন্দলের জেরেই এ দিন ওই যুবককে খুন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে কালিয়াচকের নওদা যদুপুরের বাসিন্দা কেতাবউদ্দিনের মেয়ে সামিমা খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয় সাদিকুলের। তাঁদের একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে রয়েছে। এদিন বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ সাদিকুলকে জাকিরের অনুগামীরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় গ্রামেরই এক লিচু বাগানে। তারপর তাঁকে গুলি করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। তার পেটে ও মাথায় গুলি লাগলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। গুলির শব্দে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে গেলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।

Advertisement

ঘটনার পরই বকুলের অনুগামীরা মৃতদেহ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ফেলে পথ অবরোধ শুরু করেন। বকুল শেখের নেতৃত্বে ঘন্টা খানেক ধরে চলে এই অবরোধ। জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নিত্যযাত্রীদের চরম বিপাকে পড়ে। পরে কালিয়াচক থানার পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তুলে দেয়। পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সাদিকুলের স্ত্রী সামিমা বিবি বলেন, ‘‘বাইরে থেকে ঘুরে এসে বাড়িতে খাওয়া দেওয়া করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আমার স্বামী। সেই সময় জাকির শেখের ছেলেরা আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে যায় গ্রামেরই এক লিচু বাগানে। বাগানটি বাড়ি থেকে তিনশো মিটার দূরে। পরে গ্রামের মানুষের কাছে শুনতে পাই, আমার স্বামীকে গুলি করে খুন করেছে তারা।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই গফুর মোমিন নামে ওই এলাকার এক ব্যক্তি খুন হন। তিনি জাকিরের অনুগামী ছিলেন। ওই ঘটনায় অভিযোগ উঠে সাদিকুলের বিরুদ্ধেও। তাঁকে ডিসেম্বর মাসে আগ্নেয়াস্ত্র সমেত গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে, পুরোনো বিবাদের জেরেই এই খুন করা হয়েছে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরোনো বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

বকুল শেখের অভিযোগ, ‘‘জাকির কংগ্রেস কর্মী। এই অঞ্চলে তৃণমূল শক্তিশালী। সে জন্য সন্ত্রাস করছে তারা। এদিন আমাদের এক কর্মীকে গুলি করে খুন করেছে জাকির ও তাঁর ছেলেরা। ঘটনাটি আমরা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ এই ঘটনায় জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement