জ্বলন্ত গুদাম। — নিজস্ব চিত্র
একটা দুর্ঘটনাই সামনে এনে দিয়েছে মালবাজার শহরে বেআইনি গুদামের বাড়বাড়ন্তের ছবিটা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সহজেই আগুন ধরে যেতে পারে এমন দাহ্য পদার্থের অবৈধ গুদামে ঠাসা হয়ে রয়েছে মালবাজার। এমনই একটি অবৈধ গুদামে মঙ্গলবার রাতে আগুন লেগে যায়। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে মালবাজার দমকল কেন্দ্রের দুটি ইঞ্জিনের ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।
মালবাজার পুরসভার প্রান্তিক এলাকা প্রমোদনগর কলোনির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানার বাইরে থাকা এই গুদামটিতে প্রচুর টায়ার, বস্তা, প্লাস্টিক, কারখানার ভাঙা সামগ্রী মজুত ছিল। কোনও অনুমোদন ছাড়াই গজিয়ে ওঠা এই গুদামের আগুনের ঘটনায় শহরের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। দমকলের তরফে বুধবার গুদাম মালিক আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। এ দিন এলাকা পরিদর্শনে আসেন মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি। মালবাজারে সরকারি আবাসন লাগোয়া এলাকাতে অভিযুক্ত গুদাম মালিকের আরও একটি অবৈধ গুদাম রয়েছে বলেও স্থানীয় বাসিন্দারা মহকুমাশাসককে অভিযোগ করেন। মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি জানান, মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্য গুদামটিও বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে ওই দুটি গুদাম নয়, শহরে এমন আরও বহু গুদাম রয়েছে বলে অভিযোগ। পানোয়ারবস্তি ছাড়া মহাকালপাড়া, হাটখোলা, রামকৃষ্ণ কলোনি, আদর্শ কলোনি, দক্ষিণ কলোনির মত ঘিঞ্জি এলাকায় অন্তত ১০টি দাহ্যপদার্থ ঠাসা অবৈধ গুদাম রয়েছে বলেও দমকল কেন্দ্রের সূত্রে জানানো হয়েছে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, লোকচক্ষুর আড়ালে অবৈধ গুদাম গড়ে তোলার সুবিধার জন্যে শহরের সরু সরু গলি বা বড় বাড়ির পেছনে এ ধরনের গুদাম গড়ে উঠছে। সবকটি গুদামেই চা বাগানের কারখানার ভাঙা সামগ্রী, পুরনো পিচের ড্রাম, চট, বস্তার মত মালপত্র মজুত থাকে। বেশকিছু গুদামে চোরাই পথেও মাল ঢোকে বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে দ্রুত প্রশাসনিক তৎপরতা দাবি করেছে মালবাজারের ব্যবসায়ী সংগঠন মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনও।
কালীপুজোর ঠিক আগে একটি গুদামে আগুন ধরে যাওয়ায় আতঙ্কিত সাধারণ বাসিন্দারাও। তবে পুরপ্রধান স্বপন সাহা অবশ্য জানান এই গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পুরসভার চোখ খুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘শহরের লাগোয়া এলাকা বা ঘিঞ্জি বস্তির ভেতর অবৈধ গুদামগুলিকে চিহ্নিত করে আমরা দ্রুত সেগুলিকে বন্ধ করব। সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদেরও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ বিরোধী দলনেতা সুপ্রতীম সরকারও প্রশাসনকে কড়া হাতে দমন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।