শোক: মালতীপুর হাসপাতালে মেয়ের দেহ ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা। নিজস্ব চিত্র।
পড়তে বসতে হবে বলে সাত-সকালে দুই মেয়েকে ঘুম থেকে টেনে তোলেন মা। হাতমুখ ধুইয়ে দু’জনকে খাইয়েও দেন। বড় মেয়ের বয়স নয় আর ছোট মেয়ে চার বছরের। তারপর দুই মেয়েকে মা বলেন, চল ঘুরে আসি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ১৫০ মিটার দূরে একটি পুকুরে একে-একে দুই মেয়েকেই ছুঁড়ে ফেলে দেন মা, অভিযোগ এমনই।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর পুকুর থেকে উদ্ধার হয় দুই মেয়ের নিথর দেহ। মালদহের চাঁচলের অনুপনগরে রবিবার সকালের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃত দুই বোনের নাম মাধবী (৯) ও জয়শ্রী (৪) মণ্ডল। মা যে এভাবে দুই মেয়েকে খুন করতে পারে ভাবতেই পারছেন না এলাকার মানুষ। তবে ওই ঘটনার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মা মাম্পি মণ্ডল। তাঁকে মালতীপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চাঁচলের এসডিপিও শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বামীর দাবি, মহিলার স্নায়ুর সমস্যা আছে। প্রয়োজনে পুলিশ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলবে। সবকিছু খতিয়ে দেখে আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাম্পির সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যা চলছিল স্বামী চঞ্চল মণ্ডলের। শনিবার রাতেও দু’জনের মধ্যে বচসা হয়। তারপরেই এ দিনের ঘটনা। একে শীত, তার উপরে সাতসকালে ঘটনাটি হওয়ায় বিষয়টি কেউই লক্ষ করেনি বলে জানান বাসিন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, দুই মেয়েকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার পর বাড়ি ফিরে স্বামীকে সে কথা জানিয়ে পালিয়ে গিয়ে লাগোয়া একটি ইটভাটায় লুকিয়ে পড়েন মাম্পি। খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে পেয়ে পুকুরের ধারে নিয়ে আসেন পড়শিরা। দুই মেয়েকে কোথায় ফেলেছেন তা নিজেই দেখিয়ে দেন মাম্পি। খোঁজাখুঁজির পর দুজনেরই দেহ উদ্ধার করেন বাসিন্দারা। তারপর সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন মাম্পি। তবে হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর থেকেই অঝোরে কেঁদেই চলেছেন মা।
ঘটনার আকস্মিকতায় ভেঙে পড়েছেন চঞ্চল। তিনি বলেন, ‘‘ওর স্নায়ুর সমস্যা রয়েছে। কারণে-অকারণে বাড়িতে ঝগড়াঝাটি করতে থাকে। চিকিৎসকও দেখানো হচ্ছিল। শনিবার রাতেও বচসা হয়েছিল। কিন্তু ও যে এভাবে মেয়ে দুটোকে মেরে ফেলতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’’