শিশু চুরি কাণ্ডে অভিযুক্তদের মাটিগাড়া থানা থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
বিয়ে হয়েছিল বছর দশেক আগে। সন্তান হয়নি বলে বছর খানের আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ধার-দেনা করে শিলিগুড়িতে অনেক খরচ করে ডাক্তারও দেখাতে নিয়ে যেতেন বধূটির মা। তার পরে এক দিন তিনি জানান, মেয়ের ঘরে ছেলে হয়েছে।
মেয়েকে বাঁচাতে অন্যের সন্তান যে নিয়ে নিয়ে আসা হবে ভাবতেও পারেননি ৭৫ বছরের অমলা দাস। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু চুরি ঘটনায় শনিবার রাতেই চোপড়ার বলরামপুরের বাসিন্দা অমলার বৌমা সীতা আর নাতনি অঞ্জুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই থেকে বাড়ির বাইরে রাস্তায় একা কেঁদেই চলেছেন অমলা। কেউ এলেই জানতে চাইছেন, ‘আমার বৌমা, নাতনিটা ছাড়া পাবে তো?’
গ্রামের এক কোণায় ছোট্ট বাড়ি। সংকীর্ণ রাস্তা। পুলিশ জানায়, শিশু চুরির ঘটনার মূল অভিযুক্ত সীতা দাসের স্বামী চা কারখানার শ্রমিক। বাড়িতে থাকেনই না বললেই চলে। দুই ছেলেরমধ্যে এক ছেলের ছোট দোকান, আরেকজন টোটো চালায়। সমস্যা ছিল কেবল মেয়েকে নিয়েই। নিঃসন্তান হওয়ায় অঞ্জুর শ্বশুরবাড়িতে অশান্তি লেগেই থাকত বলে জানান প্রতিবেশীরা।
এ দিন সকাল থেকেই গ্রামের মোড়ে মোড়ে জটলায় চলছিল সেই আলোচনা। কেউ বলেন, ওরা কোনওদিনও এমন ছিল না। তবে কি মেয়েকে বাঁচাতে গিয়েই এমন কাণ্ড ঘটালেন মা! অমলা বলেন, ‘‘নাতনির গর্ভে সন্তান এসেছিল বলেও শুনেছিলাম। ডাক্তার দেখানোর নাম করেই ওকে নিয়ে গিয়েছিল ওর মা। দু’দিন পর ছেলে কোলে বাড়ি ফেরে। ওদের দেখতে শ্বশুরবাড়ির লোকও আসে। ভেবেছিলাম, এ বার হয়তো সংসারটা বাঁচবে।’’
কিন্তু শিশুটিকে যে কেমন করে মা-মেয়ে নিয়ে এসেছে পুলিশ আসার পরেই টের পান ওই বৃদ্ধা। বলেন, ‘‘পরে শুনছি, ওর সন্তান গর্ভেই মারা যায়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা এক মহিলাও জানান, গ্রামের এ দিকটায় তেমন কেউ আসে না।শঙ্কর দাস, দিলীপ দাসদের কথায়, পুলিশ আসার পরেই ‘আসল’ ঘটনাটা জানাজানি হয়েছে।